ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পকে অপদস্থ করতেই ইরানে হামলা চালালো ইসরায়েল!

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৩ জুন ২০২৫

ট্রাম্পকে অপদস্থ করতেই ইরানে হামলা চালালো ইসরায়েল!

ছ‌বি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানে "প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক" বা প্রতিরোধমূলক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দিবাগত রাতে ইসরায়েল এই হামলা চালায় বলে জানিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহু জানান, "অপারেশন রাইজিং লায়ন" নামের এই অভিযানে ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্র, এবং শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করা হয়।

তিনি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আমাদের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি। যতদিন প্রয়োজন, এই অভিযান চলবে।”

ইরানের রাজধানী তেহরান ও আশেপাশে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে জানায় দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা IRNA। একইসঙ্গে ইসরায়েলের তেল আবিব শহরেও বাজে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন।

এই হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহাম্মদ-মেহদি তেহরানচি ও ফারিদুন আব্বাসি, এছাড়াও কমপক্ষে ১২ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে IRNA।

হামলার পর এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। তিনি বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন— ইরান কোনোভাবেই পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে পারবে না।”

তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, “আজ রাতে ইসরায়েল একতরফাভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় কোনোভাবে জড়িত নয়। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে— মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীকে রক্ষা করা।”

হামলার দুই ঘণ্টা আগে Truth Social-এ ট্রাম্প লেখেন, “আমরা এখনো কূটনৈতিক সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমি আমার প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তির দিকে এগোতে। ইরান একটি মহান দেশ হতে পারে— কিন্তু তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের আশা পুরোপুরি ত্যাগ করতে হবে।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমি এই অঞ্চলে কোনো যুদ্ধ চাই না। আমি চাই ইরান সফল হোক, আমরা তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে তারা পারমাণবিক অস্ত্র চাইলে সেটা সম্ভব নয়।”

ট্রাম্প আরও জানান, ইরানের সঙ্গে একটি ‘ভালো চুক্তি’ সম্পন্ন হওয়ার খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা হবে ওমানে, রবিবার।

এর আগে, সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। দুইজনের আলোচনায় ইরানে হামলার বিষয়টি উঠে আসে। ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন, আগে কূটনীতি শেষ হোক, তারপর অন্য কোনো পথ বিবেচনা করা যেতে পারে।

এছাড়াও, ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কিছু কূটনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তা সরিয়ে নিচ্ছে নিরাপত্তা বিবেচনায়।

এদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার এক প্রতিবেদনে ইরান তাদের পরমাণু বাধ্যবাধকতা মানছে না বলে জানালে উত্তেজনা আরও বাড়ে। এতে ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কা বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র।

এই ঘটনায় ট্রাম্পের ওপর আবারও পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা উঠেছে। নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন, “আমি যুদ্ধ শুরু করবো না, যুদ্ধ থামাবো।” কিন্তু তার আমলে গাজা ও ইউক্রেন সংঘাত আরও জটিল হয়েছে।

এমনকি সাম্প্রতিক সময়েও তিনি পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড এবং কানাডা অধিগ্রহণের ইচ্ছার কথাও বলেছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে হাস্যকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

সূত্র: ডেইলি বিস্ট

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×