ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

’ব্ল্যাক বক্স’ই বলে দিবে কি ঘটেছিলো এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানে

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১১:৩৮, ১৩ জুন ২০২৫

’ব্ল্যাক বক্স’ই বলে দিবে কি ঘটেছিলো এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানে

ছবি: সংগৃহীত

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান দুর্ঘটনার পর তদন্তকারীদের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠেছে বিমানের 'ব্ল্যাক বক্স'। যদিও নাম ব্ল্যাক বক্স, কিন্তু আসলে এটি উজ্জ্বল কমলা রঙের একটি যন্ত্রপাতি, যা সহজেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চোখে পড়ে। এই ছোট্ট ডিভাইসটিই এখন বলতে পারে কীভাবে এবং কেন বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল।

ব্ল্যাক বক্স আসলে দুটি অংশে বিভক্ত: ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর)। সিভিআর ককপিটে শেষ দুই ঘণ্টার সকল কথোপকথন, ইঞ্জিনের শব্দ, অ্যালার্ম এবং অন্যান্য অডিও রেকর্ড করে। অন্যদিকে এফডিআর বিমানের গতি, উচ্চতা, তেলের পরিমাণ, হেলমেটের অবস্থানসহ প্রায় ১,৫০০ ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করে। দুর্ঘটনার সময় কী ঘটেছিল তার সম্পূর্ণ চিত্র পেতে তদন্তকারীরা এই দুটির তথ্য একত্রিত করে বিশ্লেষণ করেন।

তবে এই তথ্য উদ্ধার করা কোনো সহজ কাজ নয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্ল্যাক বক্স পাওয়ার পর সাধারণত এক থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে এর তথ্য ডিকোড করতে। প্রথমে যন্ত্রটি পরীক্ষা করে দেখা হয় কোনো ক্ষতি হয়েছে কিনা। যদি এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে বিশেষ ল্যাবে পাঠানো হয় মেরামতের জন্য। এরপর বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে তথ্য উদ্ধার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে এই প্রক্রিয়া আরও বেশি সময় নিতে পারে।

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় ব্ল্যাক বক্সটি পাওয়া গেছে প্রাথমিক তদন্তে। এভিয়েশন এক্সপার্টরা বলছেন, এই বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে পাওয়া তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ এটি একটি আধুনিক ড্রিমলাইনার বিমান। বিমানটি রানওয়ে থেকে পিছলে যাওয়ার কারণ, পাইলটদের শেষ মুহূর্তের কথোপকথন, ইঞ্জিনের অবস্থা - সবই জানা যাবে এই ব্ল্যাক বক্স থেকে।

মজার বিষয় হলো, ব্ল্যাক বক্স তৈরি করা হয় অত্যন্ত মজবুতভাবে। এটি ৩,৪০০ গ্রামের চাপ, ১,১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৩০ দিন পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরে টিকে থাকতে সক্ষম। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে শতাধিক বিমান দুর্ঘটনায় ব্ল্যাক বক্সই হয়ে উঠেছে সত্যিকারের গোয়েন্দা, যা উদ্ধার করে আনে দুর্ঘটনার গোপন রহস্য।

এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এখন অপেক্ষা শুধু ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ শেষ হওয়ার। তদন্তকারীরা আশা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করতে পারবেন। তবে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেতে কয়েক মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত, এই ছোট্ট কমলা রঙের বাক্সটিই হয়তো বলতে পারবে কেন ভেঙে পড়ল একটি আধুনিক ড্রিমলাইনার বিমান, এবং কীভাবে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে।

সাব্বির

আরো পড়ুন  

×