ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জেন-জি প্রজন্ম কি আসলেই ফোন ছাড়া থাকতে পারে না? অনুসরণ করে দেখুন এই ৭টি ডিজিটাল ডিটক্স কৌশল

প্রকাশিত: ০০:৫৬, ১২ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:৫৭, ১২ জুন ২০২৫

জেন-জি প্রজন্ম কি আসলেই ফোন ছাড়া থাকতে পারে না? অনুসরণ করে দেখুন এই ৭টি ডিজিটাল ডিটক্স কৌশল

মোবাইল ফোন আর স্ক্রিনের দুনিয়া যেন জেন-জি প্রজন্মের শ্বাস-প্রশ্বাস। তারা এই প্রযুক্তির ভেতরেই বড় হয়েছে, বন্ধুত্ব, বিনোদন, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য সবকিছুই এখন এই ছোট্ট পর্দায়। কিন্তু যখন স্ক্রিন টাইম দিনে ৯ ঘণ্টা ছাড়িয়ে যায়, রাতভর স্ক্রলিং অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়, তখন কিন্তু ক্লান্তি, উদ্বেগ আর একধরনের ভারাক্রান্ত মানসিকতা পেয়ে বসে। তাই দরকার ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ তবে সেটা যেন কঠিন কোনো আত্মত্যাগ না হয়ে যায়।

এই প্রজন্মের জন্য “ফোন ছেড়ে দাও” বলাটা যেন পানিতে থাকা মাছকে শুকনো মাটিতে উঠতে বলা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন না করেও সেই সম্পর্কটাকে একটু ভালো, একটু সচেতন করতে পারে। চলুন জেন-জির জন্য কিছু এমন সহজ, মজাদার আর কার্যকর ডিজিটাল ডিটক্স পদ্ধতি জেনে নেওয়া যাক, যেগুলো আত্মোপলব্ধি বাড়াবে বিনা যন্ত্রণায়।

ডিটক্স নয়, শুরু হোক ‘ডিজিটাল ডায়েট’ দিয়ে

হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ না করে শুরু করুন একটু কমিয়ে ঠিক যেমন মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসে রাশ টানতে হয়। ইনস্টাগ্রাম বা টিকটক যদি আপনার মূল সময়-খেকো হয়, তাহলে প্রতিদিন ৪৫ মিনিটের টাইম লিমিট সেট করুন। টাইমার বেজে উঠলে, সেটা কোনো শাস্তি নয় শুধু একটা নম্র স্মরণ।

আরও ভালো কৌশল হতে পারে, প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট অ্যাপ বেছে নেওয়া আজ শুধু টিকটক, কাল শুধু ইউটিউব। এতে একটার পর একটা অ্যাপে ঝাঁপ দেওয়া কমবে, কিন্তু মজা থাকবে আগের মতোই।

মন ছুঁয়ে যাওয়া ‘টেক-ফ্রি জোন’ তৈরি করুন

“ঘুমানোর ঘরে ফোন নয়” এই নিয়ম কতটা মানা যায়? বরং এমন কিছু জায়গা তৈরি করুন, যেখানে আপনি নিজেই ফোন ছাড়তে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। যেমন, ঘরের কোণায় একটা বই পড়ার বা জার্নাল লেখার আরামদায়ক স্পট, বাথরুমে স্ক্রিন না রেখে শুধু মিউজিক স্পিকার রাখা, কিংবা বারান্দায় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আঁকিবুকির মুহূর্ত।

টিপস: এই সময়গুলোকে আরও রোমান্টিক করে তুলুন। হালকা আলো, সুন্দর খাতা, লো-ফাই মিউজিক যেন নিজের জন্য বানানো ছোট্ট একটা উৎসব।

ফোনটা রাখুন, কিন্তু ব্যবহার বদলান

ফোন ছাড়া থাকা নয়, বরং এর ব্যবহারটা বদলে ফেলুন। স্ক্রলিংয়ের বদলে এমন কিছু অ্যাপ ব্যবহার করুন, যেগুলো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। যেমন, ‘Finch’ আপনার আত্মোপলব্ধি বাড়াবে, ‘Stoic’ মন-মেজাজ ধরে রাখবে, আর ‘Headspace’ মেডিটেশনের অভ্যাস গড়ে তুলবে।

আর হোম স্ক্রিনটা নতুনভাবে সাজান। সোশ্যাল অ্যাপগুলো এক পেজ পিছনে সরিয়ে দিন, সামনে রাখুন কিছু শান্তিদায়ক ওয়েলনেস অ্যাপ বা প্রশান্তিকর ওয়ালপেপার।

হঠাৎ বাদ না দিয়ে বিকল্প দিন

যেকোনো অভ্যাস বদলানোর সেরা উপায় হলো, সেই জায়গায় ভালো কিছু বসানো। “ফোন কম ব্যবহার করব” বললেই একটা ফাঁকা তৈরি হয়, যেটা খুব দ্রুতই বোরডমে পরিণত হয়।

তাই কিছু সহজ বিকল্প ট্রাই করুন ১৫ মিনিট স্ক্রলিংয়ের বদলে ১৫ মিনিট হাঁটা, নাচ বা স্ট্রেচিং। ইউটিউব ঘাঁটার সময়টায় পডকাস্ট চালিয়ে দিন। টেক্সট করার বদলে ভয়েস নোট বা সরাসরি ফোনে কথা বলা শুরু করুন।আরেকটা মজার অভ্যাস হতে পারে প্রতিদিন ১০ মিনিট স্ক্রিন ছাড়া “ইচ্ছাকৃত বোরডম”। মাথায় অবাক করা নতুন সব ভাবনা এসে ভিড় করবে!

সকালের শুরু হোক স্ক্রিন ছাড়া

দিনটা যেমন শুরু হয়, বাকি সময়টাও অনেকটা সেভাবেই কাটে। ঘুম ভাঙতেই ফোন হাতে নেওয়া মানেই ২৭টা নোটিফিকেশন আর দুনিয়ার সব ঝামেলা মাথায় নিয়ে দিন শুরু।

চেষ্টা করুন “১৫-৩০-৬০” নিয়মে চলতে:
১৫ মিনিট: বিছানা গুছিয়ে, মুখ ধুয়ে পানি পান করুন।
৩০ মিনিট: সোশ্যাল মিডিয়া নয়, বরং কিছু সুরেলা গান বা পডকাস্ট।
৬০ মিনিট: মেসেজ বা ইমেইল চেক একটু দেরিতে।

কমপক্ষে ১৫ মিনিট পারলেও সেটাই একটা জয়।

অন্যদের সঙ্গে মিলে অফলাইন হোন

একাই ডিটক্স করা কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে মিলে করলেই ব্যাপারটা হয়ে যায় আনন্দময়। “নো-স্ক্রল সানডে” বা “মিউট মানডে” এর মতো ছোট্ট চ্যালেঞ্জ শুরু করুন।একসাথে এমন কিছু প্ল্যান করুন যেখানে ফোনের প্রয়োজনই পড়বে না বোর্ড গেম নাইট, হাঁটা বা আড্ডাভিত্তিক সিনেমা দেখা। এতে বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে, কারণ তখন আপনারা একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন পাশে বসে আলাদা স্ক্রিনে ডুবে নেই।

রাতের ফোন ব্যবহারে বদল আনুন

রাতে ফোনে স্ক্রল করতে করতে ঘুম আসা তো দূরের কথা উল্টো উদ্বেগ বাড়ে, ঘুম কমে, মেলাটোনিন নষ্ট হয়। তাই জেন-জিকে মোমবাতি জ্বেলে বই পড়ার উপদেশ নয়, বরং একটু সহজ কিছু দরকার।

বিকল্প হিসেবে:
রাতের জন্য ‘সানসেট ল্যাম্প’ ব্যবহার করুন।
টিকটকের বদলে অডিওবুক বা ASMR ট্রাই করুন।
চোখে পড়ার মতো জায়গায় রাখুন একটা জার্নাল, বই বা ফিজেট টয় চার্জার নয়।

আর একটা কার্যকর কৌশল ফোনটা রুমের ঠিক বাইরে চার্জে রাখুন। অ্যালার্ম শুনবেন, কিন্তু রাত ২টার স্ক্রলিং ফাঁদে আর পড়বেন না।

আপনি আসক্ত নন, আপনি মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত

এটা কোনো লজ্জার ব্যাপার নয়। ডিজিটাল দুনিয়া এমনভাবেই বানানো হয়েছে এটা আপনাকে টানবেই। কিন্তু প্রতিদিনের কয়েকটা মুহূর্ত যদি আপনি নিজের জন্য রাখেন, নিজেকে অনুভব করার সুযোগ দেন তাহলেই বদল শুরু।

ডিজিটাল ডিটক্স মানে সব কিছু ডিলিট করে ‘অফ গ্রিড’ চলে যাওয়া নয়। বরং আপনি ঠিক করবেন, কোন সময়গুলো শুধু আপনার জন্য। কম আওয়াজ, বেশি আপনি।তাই শুরুটা ছোট্ট একটা পরামর্শ দিয়ে করুন। একটা কৌশল ট্রাই করুন। মনে রাখবেন অনলাইন দুনিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া নয়, বরং সেখানে আরও ভালোভাবে নিজের উপস্থিতি তৈরি করাই হলো আসল চাবিকাঠি।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/3c5nmb3k

আফরোজা

×