
ছবি: প্রতীকী
নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া নিঃসন্দেহে একটি মহৎ গুণ। এটি সম্পর্ককে মজবুত করে, ভুল বোঝাবুঝি মেটায় এবং আপনার আত্মজ্ঞান ও সহানুভূতির পরিচয় দেয়। কিন্তু আপনি যদি প্রায়ই এমন জায়গায় “আমি দুঃখিত” বলে ফেলেন যেখানে আপনার দোষ নেই— তাহলে এটি আপনার আত্মসম্মান, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিশেষ করে নম্র, সহানুভূতিশীল ও আত্মসচেতন মানুষদের মধ্যে এই অভ্যাস বেশি দেখা যায়। অনেকেই এমনকি তখনও “স্যরি” বলে ফেলেন, যখন উল্টো কেউ তাদের পায়ে পা দিয়ে দেয়। এটি সৌজন্য নয়, বরং কিছু ভ্রান্ত অভ্যাস বা মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতার ইঙ্গিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়ার পেছনে নিচের সাতটি সাধারণ ভুল কাজ করতে পারে—
১. মানুষ খুশি করার প্রবণতা
অনেকে বিরোধ এড়াতে বা কাউকে কষ্ট না দিতে প্রায়শই ক্ষমা চান। এতে সাময়িক শান্তি মিললেও নিজের মতামত, অনুভূতি ও চাহিদাগুলো চাপা পড়ে যায়।
২. মতবিরোধ এড়ানোর চেষ্টা
দ্বন্দ্ব এড়াতে “আমি দুঃখিত” বলার প্রবণতা অনেকের মধ্যে থাকে। কিন্তু এটি মূল সমস্যাকে এড়িয়ে চলার নামান্তর, যা ভবিষ্যতে বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
৩. আত্মবিশ্বাসে চির ধরানো
প্রায়শই “স্যরি” বললে আশেপাশের মানুষ ভাবতে পারে আপনি নিজের অবস্থানে দৃঢ় নন। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. অন্যের দোষ নিজের ঘাড়ে নেওয়া
আপনার দোষ না থাকা সত্ত্বেও “দুঃখিত” বললে আপনি অযথাই দায়িত্ব নিচ্ছেন, যা ভবিষ্যতে আপনাকেই আরও দোষারোপের মুখে ফেলতে পারে।
৫. নিজের আবেগকে খাটো করা
আপনার কষ্ট পাওয়াটাই যদি সমস্যার কেন্দ্র হয়, তবুও “আমি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি, দুঃখিত” বললে আপনি নিজের অনুভূতিকে অবমূল্যায়ন করছেন।
৬. অস্থায়ী মানসিক স্বস্তির জন্য ক্ষমা চাওয়া
অনেক সময় “স্যরি” বলা হয় শুধুই মনের অস্বস্তি দূর করতে। এটি সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে না, বরং উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে।
৭. লিঙ্গভিত্তিক সামাজিক প্রত্যাশা মেনে নেওয়া
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি ক্ষমা চান। সামাজিকভাবে তাদের ‘ভদ্র’ এবং ‘নমনীয়’ হতে শেখানো হয় বলেই এমনটা হয়।
মনোবিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, “দুঃখিত” বলার আগে একবার ভেবে নিন— আপনি কি সত্যিই দোষী? যদি না হন, তবে সৌজন্য বজায় রেখে নিজেকে সম্মান দিন। ক্ষমা চাওয়া হোক আন্তরিক ও প্রয়োজনে, অভ্যাসবশত নয়।
সঠিক সময়ে সঠিক কারণে ক্ষমা চাইলে সম্পর্ক হয় আরও গভীর, শ্রদ্ধাশীল এবং বিশ্বাসভাজন। কিন্তু অহেতুক ক্ষমা চাওয়া আপনাকে ক্রমশ দুর্বল করে তোলে— নিজের কাছেও, অন্যের কাছেও।
এম.কে.