
ছবি: প্রতীকী
আজকের ব্যস্ত ও সংবেদনশীল সমাজে আমরা প্রায়ই এমন কিছু মানুষের মুখোমুখি হই, যারা অন্যকে অপমান করার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পান। জনসমক্ষে কেউ যদি আপনাকে কটাক্ষ করে, তিরস্কার করে বা অপমানজনক আচরণ করে, তখন কী করবেন? প্রাচীন গ্রিক ও রোমান দার্শনিকদের অভিজ্ঞতা ও যুক্তির ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যায়।
অন্যরা আমাদের দিকে যা নিক্ষেপ করে তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কিন্তু সেই কথাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় আমরা কী করব—সরে যাব, না তা গায়ে মাখব—তা আমাদের হাতেই। এই উপলব্ধির ভিত্তিতে তিনি জনসমক্ষে অপমানিত হলে নিজেদের আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস রক্ষা করার জন্য পাঁচটি কার্যকর কৌশল রয়েছে।
প্রথম কৌশল: অপমানকারীর যোগ্যতা বিবেচনা করুন
যখন কেউ আপনাকে অপমান করে, তখন প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমি কার সঙ্গে কথা বলছি?” যদি দেখেন তিনি জীবনদৃষ্টিহীন, হতাশ, বা মননের দিক থেকে দুর্বল কেউ, তবে তার কথায় আপনার কষ্ট পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
রোমান দার্শনিক সেনেকার ভাষায়, “যাকে আপনি গুরুত্ব দেন না, তার প্রশংসায় যেমন আনন্দ পান না, তেমনি তার অপমানে কষ্ট পাওয়াও অযৌক্তিক।”
দ্বিতীয় কৌশল: সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাবেন না
অপমানের পর অনেকেই উত্তেজিত হয়ে তাৎক্ষণিক জবাব দেন। এটি একরকম প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ, যা পরবর্তীতে অনুশোচনার জন্ম দিতে পারে। বরং সময় নিয়ে শান্তভাবে ভাবুন, কেন এমন কথা বলা হয়েছে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ জানেন, কে কী বলেছে তা দিয়ে নিজের মর্যাদা নির্ধারিত হয় না।
তৃতীয় কৌশল: পাথরের মতো নিরুত্তাপ থাকুন
অপমানের সময় উত্তেজিত না হয়ে তা সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করুন। উদার মনোভাব পোষণ করে আপনি প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে পারেন—তিনি প্রতিশোধেরও যোগ্য নন। পাথর যেমন গালাগালির জবাব দেয় না, তেমনি আপনি যদি নির্বিকার থাকেন, অপমানকারী ব্যর্থ হবে।
চতুর্থ কৌশল: হাস্যরসের মাধ্যমে জবাব দিন
হাস্যরস শুধু উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত করে না, এটি আপনার আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। হাস্যরসের জবাবে প্রতিপক্ষ বুঝে নেবে আপনি তার স্তরে নামছেন না, বরং আপনি উচ্চ মানসিকতায় পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। প্রাচীন দার্শনিক ডায়োজিনিস যেমন একবার বলেছিলেন, “সে তো কখনো সঠিকভাবে কথাই বলতে শেখেনি” — এই ধরনের ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যে লুকিয়ে থাকে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি।
পঞ্চম কৌশল: সত্য থাকলে তা গ্রহণ করুন
সবসময় মনে রাখতে হবে, কারো সমালোচনার মধ্যে সত্যতা থাকতেও পারে। অযৌক্তিক আবেগ না দেখিয়ে introspection বা আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের ভুল সংশোধন করা উচিত। তবে সবাইকে খারাপ ভাবা ঠিক নয়—কারণ সমাজে অতি ভালো বা অতি খারাপ মানুষের সংখ্যা খুবই কম, বেশিরভাগ মানুষ মাঝামাঝি পর্যায়ে অবস্থান করে।
অপমান থেকে নিজেকে রক্ষা করার সবচেয়ে বড় উপায় হলো নিজেকে চেনা, নিজের শক্তি ও সীমাবদ্ধতা জানা এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো। শীতের গভীর রাতে শিশিরের শব্দ যেন বৃষ্টিপাত মনে না হয়, তার জন্য দরকার বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=OC5ugZK7Opw
এম.কে.