ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

পেন্টাগনের ভিডিওতে ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ ক্ষমতা, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মুখ খুললো ইরান

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ২৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৯:৪৮, ২৯ জুন ২০২৫

পেন্টাগনের ভিডিওতে ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ ক্ষমতা, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মুখ খুললো ইরান

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ব্যবহৃত শক্তিশালী ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ বোমার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে জোর আলোচনা। তবে এসব বোমার কার্যক্ষমতা বোঝাতে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পেন্টাগন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (MOP) বা ‘বাংকার ব্লাস্টার’ বোমা ভূগর্ভস্থ লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে প্রবেশ করছে এবং অভ্যন্তরে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। মুহূর্তেই বিস্ফোরণের তীব্রতা ও ধূলিকণায় চারপাশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

বোমা ফেলার মিশনে অংশ নেওয়া মার্কিন পাইলটরা বলেছেন, বিস্ফোরণের উজ্জ্বলতা ছিল নজিরবিহীন। তাদের ভাষায়, ‘রাতটা যেন হঠাৎ করে দিনে রূপ নেয়। এটি আমাদের দেখা সবচেয়ে উজ্জ্বল বিস্ফোরণ।’

পেন্টাগনের সংবাদ ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডান কেইন জানান, এই বোমা মাটির অনেক গভীরে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়। ফলে উপরিভাগে কোনো গর্ত বা দৃশ্যমান ক্ষতি দেখা যায় না, অথচ ভেতরের অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি জানান, ফোর্দো ইউরেনিয়াম প্লান্টের প্রতিটি বায়ু নিঃসরণ ভেন্টে ছয়টি করে বোমা পাঠানো হয়েছিল এবং সবগুলোই নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।

এই হামলায় মূল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভেতরের টানেল ও যন্ত্রপাতির ওপর। অতিরিক্ত চাপ ও তাপমাত্রার কারণে সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে বলে দাবি করেন জেনারেল ডান কেইন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমন্বিত হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি’র কথা স্বীকার করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইরানি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা এখন এসব ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করছে।’

তবে এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, এমন হামলা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি।

ইউরেনিয়াম কোথায়?

হামলার পরপরই ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বোমা বর্ষণের আগেই ইউরেনিয়ামের মজুদ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এরপর থেকেই তৈরি হয়েছে বড় এক প্রশ্নইরানের ৬০ শতাংশ মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম এখন কোথায়?

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম খুবই মূল্যবান। ফলে তা এক জায়গায় সংরক্ষণ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মন্তব্য করেছেন তারা। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, ইরানের অধিকাংশ ইউরেনিয়াম মজুদ ছিল ইসফাহান এলাকায়।

এই সপ্তাহে আইএইএ প্রধান রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত নই ইরান সম্পূর্ণ ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছে কিনা। তবে তথ্য-প্রমাণ বলছে, বড় একটি অংশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’ ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থারাও জানিয়েছে, হামলার পূর্ব মুহূর্তেই ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছেতবে কোথায় নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে নিশ্চিত তথ্য নেই।

এ নিয়ে ইরানের পক্ষ থেকেও এখনো পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পূর্ণরূপে সচল করতে ইরানের কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। বিশেষ করে ফোর্দো প্লান্টের সেন্ট্রিফিউজগুলো পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এর ফলে ইউরেনিয়াম আরও বেশি মাত্রায় বিশুদ্ধ করার কাজটিও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=BAAvh2-nWRA

রাকিব

×