ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

মানবহিতৈষী উদ্যোগে নতুন মাইলফলক, রেকর্ড ৬০০ কোটি ডলার দান করলেন ওয়ারেন বাফেট

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৯ জুন ২০২৫; আপডেট: ১১:০২, ২৯ জুন ২০২৫

মানবহিতৈষী উদ্যোগে নতুন মাইলফলক, রেকর্ড ৬০০ কোটি ডলার দান করলেন ওয়ারেন বাফেট

ওয়ারেন বাফেট ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী ও ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট এবার দাতব্যকাজে ৬০০ কোটি (৬ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার মূল্যের শেয়ার দান করে নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন। প্রায় দুই দশক আগে নিজের বিপুল সম্পদ দান করা শুরু করার পর এটিই তাঁর এ পর্যন্ত দেওয়া সবচেয়ে বড় বার্ষিক অনুদান। এই বিশাল অঙ্কের দানের ফলে মানবহিতৈষী কার্যক্রমে তাঁর মোট অবদান ছয় হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেল।

কোন কোন প্রতিষ্ঠানে গেল এই অর্থ?

বাফেটের এই বিশাল অনুদান প্রধানত পাঁচটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দাতব্য সংস্থা গেটস ফাউন্ডেশন, যা বিল গেটস ও মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। গেটস ফাউন্ডেশনকে তিনি ৯৪ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার দান করেছেন।

এছাড়াও, বাকি চারটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বাফেটের পরিবারের সদস্যদের দিয়ে পরিচালিত। এর মধ্যে সুসান থমসন বাফেট ফাউন্ডেশনকে তিনি ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩৮৪ শেয়ার দিয়েছেন। তাঁর তিন সন্তান হাওয়ার্ড, সুজি ও পিটারের নেতৃত্বে থাকা তিনটি দাতব্য সংস্থা—হাওয়ার্ড জি বাফেট ফাউন্ডেশন, শেরউড ফাউন্ডেশন ও নোভো ফাউন্ডেশনকে প্রতিটি ৬ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৬টি করে শেয়ার দেওয়া হয়েছে। এই অনুদান ওয়ারেন বাফেটের মানবহিতৈষী দর্শন এবং পারিবারিক মূল্যবোধের প্রতি তার গভীর প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।

সম্পদের অবস্থান ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, এই রেকর্ড পরিমাণ অনুদান দেওয়ার আগপর্যন্ত ওয়ারেন বাফেটের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং তিনি বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। ৬০০ কোটি ডলার দানের পর তিনি এখন বিশ্বের ধনীর তালিকায় ৬ নম্বরে নেমে এসেছেন। তবে, এই দান সত্ত্বেও ওয়ারেন বাফেট এখনও তাঁর বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের ১৩.৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ধরে রেখেছেন।

বাফেট এর আগেও উদারভাবে দান করেছেন। গত বছরের জুনে তিনি ৫৩০ কোটি ডলার এবং গত নভেম্বরে তাঁর পারিবারিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ১১৪ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছিলেন। এক বিবৃতিতে বাফেট স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের কোনো শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা তাঁর নেই; বরং তিনি তাঁর অর্জিত সম্পদের বেশির ভাগটাই দান করে দিতে চান।

মানবতার জন্য বাফেটের অঙ্গীকার

৯৪ বছর বয়সী ওয়ারেন বাফেট ২০০৬ সাল থেকে তাঁর সম্পদ দান করা শুরু করেন। মানবহিতৈষী কাজে নিজের অর্জিত সম্পদ ব্যয় করার দৃঢ় ইচ্ছা থেকে গত বছর তিনি তাঁর উইল পরিবর্তন করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর মৃত্যুর পর বাকি সম্পদের ৯৯.৫ শতাংশই একটি দাতব্য ট্রাস্টে দেওয়া হবে, যেটির তত্ত্বাবধান করবেন তাঁর সন্তানেরা—সুসি বাফেট (৭১), হাওয়ার্ড বাফেট (৭০) ও পিটার বাফেট (৬৭)। তবে, গত বছরের জুনে বাফেট এও বলেছিলেন যে, তাঁর মৃত্যু হলে গেটস ফাউন্ডেশনের জন্য তাঁর অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে।

ওয়ারেন বাফেটের এই বিশাল দান এবং তাঁর জীবনব্যাপী মানবহিতৈষী কার্যক্রম নিঃসন্দেহে বিশ্বজুড়ে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। এটি শুধু আর্থিক অনুদান নয়, বরং একজন সফল মানুষের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মানবতার প্রতি তার গভীর ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সাব্বির

×