ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

মতামত

ইন্দিরা বনাম মোদী: কে ছিলেন ভারতের জন্য বেশি ভয়ংকর শাসক?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ২৯ জুন ২০২৫

ইন্দিরা বনাম মোদী: কে ছিলেন ভারতের জন্য বেশি ভয়ংকর শাসক?

ছবি: সংগৃহীত

জুন মাসজুড়ে ভারতের রাজনীতিতে ফের উঠেছে ‘জরুরি অবস্থা বনাম বর্তমান অবস্থা’র বিতর্ক। ৫০ বছর আগে ইন্দিরা গান্ধীর ঘোষণা করা জরুরি অবস্থার পটভূমিতে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন: #Emergency@11—যার মাধ্যমে মোদী সরকারের শাসনকালকে দীর্ঘস্থায়ী ‘নরম জরুরি অবস্থা’ বলেই চিহ্নিত করেছেন তিনি।

একজন ইতিহাসবিদ ও নাগরিক হিসেবে রামচন্দ্র গুহ তুলে ধরেছেন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মিল—আরো জানিয়েছেন দুইটি বড় পার্থক্য।

ইন্দিরা ও মোদী শাসনের মধ্যে ৫টি মিল

১. ব্যক্তিত্বের পূজা এবং একনায়ক মনোভাব
ইন্দিরা গান্ধী এবং নরেন্দ্র মোদী—দুজনেই নিজ নিজ সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা ছিলেন। তারা দুজনেই এমন একটা ভাব তৈরি করেছেন যে, দল, সরকার, এমনকি দেশও যেন শুধু তাদের মাধ্যমেই চলে। ইন্দিরা নিজেকে ‘দেশের মা’ হিসেবে উপস্থাপন করতেন, আর মোদী নিজেকে ‘দেশের চৌকিদার’, ‘বিশ্বগুরু ভারত’-এর প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন। এই ভাবমূর্তি তৈরি করতে সরকারিভাবে বিজ্ঞাপন, টিভি, রেডিও, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল প্রচার চালানো হয়—যা করদাতাদের অর্থ দিয়েই হয়।

২. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত
গণতন্ত্র মানে বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন—এসব স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে কাজ করবে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সময় যেমন আদালত বা আমলাদের কাছ থেকে ‘বিশ্বস্ততা’ বা আনুগত্য চাওয়া হতো, মোদীর সময়েও একই রকম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে অনেক আমলা ও তদন্ত সংস্থা সরকার বিরোধীদের হেনস্তা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য এক ভয়ানক সংকেত।

৩. নিজের মতো একক সিদ্ধান্ত নেওয়া
সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হলেন ‘প্রথমের মধ্যে প্রথম’, মানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্য মন্ত্রীদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিন্তু ইন্দিরা ও মোদী দুজনেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত একাই নিয়েছেন। ইন্দিরার ক্ষেত্রে PN হাকসর বা সঞ্জয় গান্ধীর মত ঘনিষ্ঠরা প্রভাব ফেলতেন। আর মোদীর সবচেয়ে কাছের এবং সিদ্ধান্তে প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন অমিত শাহ। পরামর্শ নয়, বরং ঘনিষ্ঠদের দিয়ে চালানো একক শাসন চলছে।

৪. রাজ্য সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দেশ, যেখানে রাজ্য সরকারের স্বাধীনতা থাকা উচিত। ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সরকার ভেঙে দিতে ৩৫৬ ধারা ব্যবহার করতেন। মোদী সরকার সরাসরি সরকার না ভেঙে গভর্নর, তদন্ত সংস্থা বা রাজনৈতিক ভাঙন ঘটিয়ে রাজ্য সরকারকে অকার্যকর করে তোলে।

অনেক জায়গায় নির্বাচনে হেরে গেলেও তারা অন্যদল ভাঙিয়ে সরকার গঠন করেছে—যা জনগণের রায়কে অমান্য করার শামিল।

৫. দেশপ্রেমের নামে বাড়াবাড়ি
জাতীয়তাবাদ ভালো, কিন্তু সেটাকে অন্যকে দমনে ব্যবহার করলে সেটা হয় বিপজ্জনক। ইন্দিরা গান্ধী যেমন বিরোধী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণকে ‘বিদেশি এজেন্ট’ বলেছিলেন, ঠিক তেমনি মোদী সরকারও রাহুল গান্ধীর মত বিরোধীদের নিয়ে অপপ্রচার চালায়—তাকে ‘বিদেশিদের অর্থে চালিত’ বলা হয়।
আজকাল যে কেউ সরকারের সমালোচনা কর

ইন্দিরা ও মোদী শাসনের মধ্যে ২টি পার্থক্য 
ধর্মনিরপেক্ষতা 

ইন্দিরা গান্ধী একজন মুসলিম দেহরক্ষী রাখতেন এবং চারজন মুসলিম মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ করেছিলেন। মোদী সরকার এখন পর্যন্ত একজন মুসলিম এমপিও দেয়নি। ধর্মীয় বিদ্বেষ তার আমলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রশাসন, সেনাবাহিনী এমনকি মিডিয়ায়ও।

পরিবারতন্ত্র 
ইন্দিরার পরিবারতন্ত্র শুরু করেছে কংগ্রেসে রাজীব, সঞ্জয়কে সামনে এনে। কিন্তু মোদীর নিজের কোনো পরিবার রাজনীতিতে নেই। তাই বিজেপির ভোটে এটা বিশাল সুবিধা দেয়—যার ফলেই রাহুল গান্ধীর ‘ডাইনেস্টিক’ ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বর্তমান কতটা ভয়াবহ?
গুহ বলছেন, আজ কিছু স্বাধীন অনলাইন পোর্টাল ও আঞ্চলিক পত্রিকা সত্য বলার সাহস রাখে, যা ইন্দিরার সময় ছিল না। কিন্তু ভারতের প্রধান সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো—বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, তদন্ত সংস্থা—সবখানেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ধর্মীয় বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে পড়া, যা কেবল রাজনৈতিক কথাবার্তায় নয়, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, এমনকি সেনাবাহিনীতেও প্রতিফলিত হচ্ছে।

গুহর মতে, “এই সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী একনায়কতন্ত্র ভারতকে যে ক্ষতি করছে, তা কাটিয়ে উঠতে দশকের পর দশক লাগবে।”

সূত্র: https://scroll.in/article/1083976/ramachandra-guha-indira-gandhi-vs-narendra-modi-whose-regime-has-been-worse

মুমু ২

×