
গাড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্য, যেখানে ফোর্ড, জেনারেল মোটরস ও ক্রাইসলারের জন্ম, সেই রাজ্যেই লেক হিউরনের উত্তরের উপকূলে অবস্থিত একটি ছোট, গাড়িমুক্ত দ্বীপ – ম্যাকিন্যাক আইল্যান্ড। ৩.৮ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপে ৬০০ জন স্থায়ী বাসিন্দা থাকেন, কিন্তু গাড়ি নয় – এখানে চলাচলের প্রধান ভরসা ঘোড়া এবং সাইকেল।
১৮৯৮ সালে একটি গাড়ি ‘ব্যাকফায়ার’ করলে সেটির শব্দে দ্বীপের ঘোড়ারা ভয় পায়, আর সেখান থেকেই শুরু হয় গাড়িনিষিদ্ধ এক ইতিহাস। মাত্র দুই বছর পর পুরো দ্বীপজুড়ে অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন নিষিদ্ধ করা হয় – এবং সেই নিয়ম আজও চালু আছে।
ঘোড়ার রাজত্বে দ্বীপজীবন
"এখানে ঘোড়াই রাজা," বলেন উরভানা ট্রেসি মোর্স, যিনি দ্বীপের প্রধান রাস্তায় একটি হস্তশিল্পের দোকান চালান। ঘোড়ায় টানা গাড়ি, সাইকেল অথবা হাঁটাপথেই মানুষ চলাচল করে। এমনকি গার্বেজ অপসারণ থেকে শুরু করে ফেডএক্স প্যাকেট ডেলিভারিও হয় ঘোড়ার মাধ্যমে।
গ্রীষ্মে ১২ লাখ পর্যটক ২০ মিনিটের ফেরিতে দ্বীপে এসে পড়ে, বিশেষ করে ম্যাকিন্যাক শহরের দক্ষিণ দিকে। সেখানে তারা বিখ্যাত ফাজ কেনে, ৭০ মাইল পথজুড়ে ট্রেইলে ঘোরে, আর ‘ক্লিপ-ক্লপ’ শব্দে অতীতকে অনুভব করে।
আদিবাসী ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
প্রচুর প্রাচীন কবরস্থানসহ এই দ্বীপ একসময় ছিল আনিশিনাবে আদিবাসীদের পবিত্র স্থান। "এটি আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়," বলেন আদিবাসী প্রতিনিধি এরিক হেমেনওয়ে। দ্বীপের নতুন ম্যাকিন্যাক আইল্যান্ড নেটিভ আমেরিকান মিউজিয়াম সেই ইতিহাস তুলে ধরছে।
ঐতিহাসিক কেল্লা ও ১৩৮ বছরের পুরনো হোটেল
দ্বীপে এখনও ব্রিটিশ আমলে তৈরি ফোর্ট ম্যাকিন্যাকে কামান দাগার ঐতিহাসিক রূপায়ণ হয়। ১৩৮ বছরের পুরনো গ্র্যান্ড হোটেল-এ রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম বারান্দা, যেটি এখনও গিল্ডেড এইজের স্থায়ী চিহ্ন।
নিসর্গ, নৈঃশব্দ্য ও জীবনযাপন
দ্বীপের ৮০% অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ম্যাকিন্যাক আইল্যান্ড স্টেট পার্ক, যেখানে রয়েছে শতবর্ষী বন, বিশাল চুনাপাথরের স্তম্ভ, এবং আইল্যান্ড-পরিক্রমাকারী ৮.৫ মাইলের হাঁটা ও সাইকেলপথ।
এখানে সাইকেল প্রধান বাহন হলেও ঘোড়াই দ্বীপের প্রাণ – "ঘোড়া ছাড়া এই দ্বীপ কিছুই না," বলেন ফেরি ও মাল পরিবহণ সংস্থা আর্নল্ড ফ্রেইটের কর্মী হান্টার হোয়াগল্যান্ড। শীতকালে ২০-৩০টি ঘোড়া থেকে গেলেও, বসন্তে আরও ২০০-৩০০ ঘোড়া ফেরিতে দ্বীপে আনা হয়।
একটি ধীরগতির জীবনের প্রেমে পড়া
"আমি বছরে ৯ মাস সাইকেল চালাই," বলেন মোর্স। "বনের মধ্যে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে দোকানে আসার এই অনুভূতিটা আমার দিনের গতি ঠিক করে দেয়।"
জুন মাসে অনুষ্ঠিত লিলাক ফেস্টিভাল, তারার ভরা রাতের আকাশ দেখা কিংবা মেরিনার পাশে বসে ফাজ খাওয়া – এসবই গাড়িমুক্ত এক শান্ত জীবনের আনন্দ।
এবং সবটাই হয় ইঞ্জিনের আওয়াজ ছাড়াই।
Jahan