
এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে রবিবার ইয়াঙ্গুনে বাহরাইনের বিরুদ্ধে গোলের পর বাংলাদেশের মেয়েদের উচ্ছ্বাস
দারুণ জয়ে এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাই মিশন শুরু করল বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে যোজন এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করল বাংলার বাঘিনীরা। আফঈদা খন্দকারের দল তুলে নিল ৭-০ গোলের বড় জয়। রবিবার ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামে খেলার প্রথমার্ধেই ৫-০ গোলে এগিয়ে যায় পিটার বাটলারের শিষ্যরা। তহুরা খাতুন করেছেন জোড়া গোল। একটি করে গোল শামসুন্নাহার জুনিয়র, ঋতুপর্ণা চাকমা, কোহাতি কিসকু ও মুনকি আক্তার। একটি গোল আত্মঘাতী।
সাত গোলের দুটিতেই অ্যাসিস্ট মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী। র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৩৬ ধাপ পিছিয়ে। যেখানে বাহরাইনের র্যাঙ্কিং ৯২, বাংলাদেশের ১২৮। কিন্তু মাঠের খেলায় সেই ছাপ মোটেও ছিল না। মনিকা, ঋতুপর্ণা, মারিয়াদের পাস, মুভ, ড্রিবলিং দেখে রীতিমতো মুগ্ধ ফুটবলপ্রেমীরা। একই সি-গ্রুপে দিনের আরেক ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে স্বাগতিক মিয়ানমার। বুধবার এই মিয়ানমারকে মোকাবিলা করবে আফঈদারা। যেটিকে অলিখিত ফাইনালই বলা যায়।
আক্রমণ উঠলেই যেন মিলবে গোল! বাহরাইনের বিপক্ষে এমন ক্ষুরধার পারফরম্যান্সই দেখাল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। বিরতির আগেই পিটার বাটলারের শিষ্যরা জাল খুঁজে নিল পাঁচবার। পরের অর্ধে আরও দুটি। ইয়াঙ্গুনে এদিন বাহরাইনের রক্ষণে চাপ ধরে রেখে দশম মিনিটে প্রথম গোল করে বাংলাদেশ। মাঝমাঠ আসা লম্বা ক্রস দারুণ ক্ষিপ্রতায় অফসাইডের ফাঁদ বেরিয়ে পড়েন শামসুন্নাহার জুনিয়র। আগুয়ান গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বাঁ পায়ের চিপে জাল খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড।
১৫ মিনিটে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। স্বপ্না রানীর আড়াআড়ি ক্রস ধরে বক্সে ঢুকে সামনে ডিফেন্ডার থাকলেও বাঁ পায়ের দৃষ্টিনন্দন বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ঋতুপর্ণা। ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। ২১ মিনিটে বক্সে বল পেলেও মনিকা চাকমা ক্রস ধরার কেউ ছিল না। একটু পর মারিয়া মান্দার শট ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে যায়। ২৪ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন মনিকা চাকমা। গোলকিপারকে একা পেয়েও ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে হতাশায় মুখ ঢাকেন।
৩২ মিনিটে আফঈদা খন্দকারের ক্রসে তহুরা খাতুন হেডে জালে বল জড়ালেও অফসাইডের কারণে হয়নি গোল। একটু পর শামসুন্নাহার জুনিয়র ছোট বক্সে বল পায়ে ঢুকেও তালগোল পাকিয়ে নিতে পারেননি শট। ৩৫ মিনিটে বক্সের ভেতরে তহুরার শট ব্লকড হয় ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে।
৩৭ মিনিটে বিপদ আঁচ করতে পেরে এক ছুটে বক্সের বাইরে এসে জোরালো শটে বল ক্লিয়ার করেন দুটি সাফ জয়ী এই গোলকিপার। একটু পর পায়ের কারিকুরিতে বল বের করে মারিয়ার নেওয়া শট অল্পের জন্য যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ৪০ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় বাংলাদেশ। মনিকার কর্নারের পর মারিয়া বল ধরে অনেকটা এগিয়ে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান বক্সে, তা ক্লিয়ার করতে পারেনি বাহরাইনের ডিফেন্ডাররা।
বরং এক জনের পায়ে লেগে বল চলে যায় কোহাতি কিসকুর কাছে। জটলার মধ্যে পাওয়া সুযোগ টোকায় কাজে লাগান এই ডিফেন্ডার। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরও দুই গোল পায় বাংলাদেশ। বক্সের ঠিক ওপর থেকে তহুরার শট গোলকিপারের গ্লাভস ছুঁয়ে ঠিকানা খুঁজে পায়। একটু পর শামসুন্নাহার জুনিয়রের কাট ব্যাক থেকে পাওয়ার বল নিখুঁত টোকায় জালে জড়িয়ে দেন এই ফরোয়ার্ডই। বাহরাইন এই ফাঁকে দুটি দূরপাল্লার সুযোগ থেকে গোল শোধ দিতে পারেনি। আক্রমণাত্মক ফুটবলে প্রতিপক্ষকে স্রেফ দর্শক বানিয়ে রাখে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তাদের গতির সঙ্গে কোনোমতেই পেরে ওঠেনি মধ্যপ্রাচ্যের দলটি।
‘সি’ গ্রুপে বাংলাদেশের অন্য দুই প্রতিপক্ষ হলো স্বাগতিক মিয়ানমার ও তুর্কমেনিস্তান। প্রতিটি দল একবার করে পরস্পরের মুখোমুখি হবে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় নারী এশিয়ান কাপের টিকিট পাবে।