
শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইশা আলম (১৮) অদম্য মনোবল ও অসাধারণ ইচ্ছাশক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যেখানে অনেকেই মাতৃত্বকালীন বিশ্রাম নিয়ে দিন কাটান, সেখানে ইশা সন্তান জন্মের মাত্র দুই দিন পরেই হাসপাতালের বিছানায় বসে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
গত শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দেন ইশা। আর রবিবার (২৯ জুন) সকাল ১০টায় নিপুণ ক্লিনিকেই অনুষ্ঠিত হয় তাঁর বাংলা দ্বিতীয় পত্রের লিখিত পরীক্ষা। মা ও নবজাতক উভয়েই সুস্থ আছেন।
ইশার বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামে। বাবা মো. শাহ আলম সিকদারের একমাত্র মেয়ে ইশা গত বছর (২৮ জুন) বিয়ে করেন কাশাভোগ এলাকার মাহবুবুর রহমান তুষারকে, যিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
সন্তানসম্ভবা অবস্থাতেও ইশা নিয়মিত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দেয়ার পর শুক্রবার রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাঁকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ও পরীক্ষা দিতে চান ইশা। বিষয়টি কলেজের শিক্ষক মো. মাসুম মিয়াকে জানানো হলে তিনি অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামালের অনুমতিক্রমে রবিবার সকালে ক্লিনিকে উপস্থিত হয়ে এক নারী শিক্ষক ও এক নারী পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
প্রফেসর ওয়াজেদ কামাল বলেন,
মেয়েটির এমন সাহসিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। হাতের লেখা ছিল অসাধারণ সুন্দর। সে খুব মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। এই মেয়েরাই আমাদের গর্ব।
ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন,
মেয়ের এমন সাহসিকতা ও অধ্যবসায় দেখে আমি অভিভূত। এত বড় ধকলের পরও সে পরীক্ষায় বসেছে—এটা ভাবতেই পারিনি। সবার কাছে দোয়া চাই আমার মেয়ে ও নাতনির জন্য।”
স্বামী মাহবুবুর রহমান তুষার জানান,
ইশা সবসময় পড়াশোনার ব্যাপারে আমাকে পাশে থাকতে বলত। আমি চেষ্টা করেছি সাহস ও সমর্থন দিতে। সন্তান জন্মের পরপরই পরীক্ষায় বসবে, সেটা ভাবিনি। কিন্তু তার ইচ্ছাশক্তি দেখে আমি গর্বিত।
ইশা আলম বলেন,
আমি আইন নিয়ে পড়তে চাই। একদিন বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সন্তান জন্মের পরেও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আমার শিক্ষক, পরিবার, সহপাঠী এবং চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
ক্লিনিকের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন,
ইশা অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে। তার প্রবল ইচ্ছার জোরেই সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছে। মা ও মেয়ে—দুজনেই এখন সুস্থ আছেন।
ইশার এই ঘটনা প্রমাণ করে, কঠিন সময়েও যারা স্বপ্ন ধরে রাখে, তারাই একদিন সফলতার আলোয় উদ্ভাসিত হয়। এই সাহসী কন্যা শুধু একজন শিক্ষার্থী নয়, তিনি হয়ে উঠেছেন লক্ষ নারীর অনুপ্রেরণা।
Jahan