ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

রাজশাহীতে কর্মশালা

জলবায়ু সংকটে বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে, ঝুঁকিতে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ২৯ জুন ২০২৫

জলবায়ু সংকটে বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে, ঝুঁকিতে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছরই নতুন করে প্রায় ২৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়াও এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ভয়াবহ সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় পর্যায়ে কী করণীয়, তা ঠিক করতে রাজশাহীতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং স্থানীয় সংস্থা কাটনারপাড়া নারী উন্নয়ন সংস্থা (কেএনইউএস) রোববার (২৯ জুন) সকালে নগরীর একটি হোটেলে ‘বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্য স্থানীয় পর্যায়ের সমাধান এবং পরিষেবা তৈরি করা’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মির্জা ইমাম উদ্দিন।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, তবে এর স্থানীয় প্রভাব অনেক বেশি। এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাস্তুচ্যুত মানুষের সুরক্ষা ও পুনর্বাসনে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বাস্তুচ্যুতি এখন আর ভবিষ্যতের কোনো আশঙ্কা নয়, এটি বর্তমানের কঠিন বাস্তবতা। এই সংকট কেবল আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ বা ত্রাণ বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে বাস্তুচ্যুতি প্রতিরোধের পাশাপাশি বাস্তুচ্যুতদের সুরক্ষা, অধিকার এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে কার্যকর সমাধান বয়ে আনতে।

কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ায় এখানে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের একটি জাতীয় কৌশল রয়েছে। সেই কৌশল বাস্তবায়নে সহায়তা করতেই আইওএম ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো কাজ করছে।

নরওয়ের উন্নয়ন সংস্থা নোরাড এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এবং সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

আয়োজনের লক্ষ্য ছিল, বাস্তুচ্যুতদের জন্য জেলা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে, তা চিহ্নিত করা। আলোচনার মাধ্যমে বাস্তুচ্যুতি প্রতিরোধ, বাস্তুচ্যুতদের সুরক্ষা এবং তাদের জন্য টেকসই সমাধানের পথ খোঁজা হয়।

কাটনারপাড়া নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আশুতোষ দেবের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলেনা আকতার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাটনারপাড়া নারী উন্নয়ন সংস্থা (কেএনইউএস) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মাহফুজুর রহমান।

এই কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর রাজশাহীর উপ-পরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুব, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ বেতারের উপ-আঞ্চলিক পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস, ইউসেপ বাংলাদেশ রাজশাহীর রিজিওনাল ম্যানেজার শাহিনুল ইসলাম, রাজশাহী এনজিও ফোরামের ম্যানেজার রবিউল হক, সমাজ সেবা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক রিদিয়া খাতুন, ওয়াল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার প্রতিনিধি লোটাস চিসিম, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান, সচেতন সোসাইটির প্রতিনিধি মাহমুদুন নবী, এসিডির প্রতিনিধি আহসানুল্লাহ রিপন, সিনিয়র সাংবাদিক কাজী নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।

মামুন-অর-রশিদ/রাকিব

×