
শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নে দেশ স্বাধীনের আগে মহারশি নদীর পার ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছিল সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর বিডিআর ক্যাম্প। তৎকালীন ক্যাম্পের সরকারি কর্মকর্তা, বিডিআর ফোর্স ও স্থানীয় এলাকাবাসীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মেটাতে ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী একটি বাজার বসানো হয়েছিল।
তাই সবার কাছে এটি ক্যাম্পের বাজার নামে পরিচিত ছিল। ঐতিহ্যবাহী এই ক্যাম্পের বাজারে স্বাধীনতার পূর্ব থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করতেন। মহারশি নদীপথে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা এখান থেকে কৃষিপণ্য আমদানি-রপ্তানি করতেন।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে বাজারের কিছু অংশ জমিসহ বিডিআর ক্যাম্পটি মহারশি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে এলাকার নামানুসারে বাজারটি ফাকরাবাদ বাজার নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাজারের জমিতে স্থানীয়রা স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে নেয় বাজারের প্রায় পৌনে দুই একর সরকারি জমি। ফলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে বাজারটি।
আশির দশকের পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাজারে জায়গা না পেয়ে রাস্তার পাশে ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এতে ব্যবসায়ীদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের জামানত ও মাসিক ভাড়া।
বাজারের ইজারাদার মোঃ সালাম বলেন, “এই বাজারে তৎকালীন সময়ে প্রতিবছর ইজারা ডাক হতো ৬০ হাজার টাকা, আর এখন বছরে মাত্র ১৪ হাজার টাকায় ইজারা ডাক হয়।”
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ মজিবর রহমান বলেন, “আমার বাপ-দাদার আমলে এই বাজারে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি, ধান-চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেচাকেনার ঐতিহাসিক বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল।”
কিন্তু বর্তমানে বাজারের সমস্ত জায়গা অবৈধ দখলদারদের দখলে। তারা নিজেরাও ব্যবসা করে না, আবার অন্যকেও ব্যবসা করতে দেয় না। ফলে সরকার প্রতিবছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, “যদি সরকার অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে বাজারের জায়গা উদ্ধার করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে বরাদ্দ দেয়, তাহলে বাজারটি সচল হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।”
সানজানা