
ছবি: সংগৃহীত
মানব মস্তিষ্ক বেশ জটিল একটি অঙ্গ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্মৃতি ও সামগ্রিক মস্তিষ্কীয় কার্যক্ষমতার অবনতির জন্য প্রস্তুত হতে হয়। এটি একটি স্বাভাবিক ও বয়সজনিত পরিবর্তন, জানান ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইকোলজিস্ট ডঃ জুডি হো। “কিন্তু যদি আপনি নিয়মিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট ভুলে যান, কয়েক মিনিট আগেই শোনা বা শেখা তথ্য ধারণ করতে না পারেন বলে একই প্রশ্ন বারবার করেন, যেগুলো আগের মতো সহজে করতে পারছেন না, অথবা আগের চেয়ে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে—তাহলে এগুলো স্বাভাবিক পরিবর্তন নয়, বরং জটিলতার লক্ষণ হতে পারে যা আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
তবুও বয়সের এই পরিবর্তনের মধ্যেও কিছু সহজ অভ্যাস আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে যোগ করলে মস্তিষ্ক সতেজ রাখা যায়—এখনই শুরু করা যাক।
১. নিয়মিত শারীরিক কর্মকাণ্ড
জেরোনটোলজিস্ট ডঃ লেকেলিন আইচেনবার্গার বলেন, “শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন ও নিয়মিত চলাফেরা করুন। রক্ত সঞ্চালন বাড়ানো মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং মেজাজ ও জ্ঞানক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এমন কোনো শারীরিক কাজ বেছে নিন যা আপনি পছন্দ করেন, যেমন দৈনিক হাঁটা বা নাচ।” শরীর এবং মানসিক সুস্থতার জন্য দৈনিক শারীরিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব প্রায় সবাই জানে, যা মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. সঠিক ঘুমের অভ্যাস
ডঃ হো বলেন, “গভীর ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বর্জ্য পদার্থ দূর করে এবং স্মৃতি সংরক্ষণ করে। দুর্বল ঘুম মস্তিষ্কের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। ঘুমের আগে রাতের রুটিন রাখা বা মনকে শিথিল করার জন্য কিছু কার্যকলাপ করলে ভালো ঘুমের সম্ভাবনা বাড়ে।” আপনি বই পড়া, ডায়েরি লেখা বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন, তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত কারণ ব্লু লাইট গভীর ঘুমের জন্য ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
৩. মস্তিষ্ক সচল রাখার কাজ
আপনি যদি নিউ ইয়র্ক টাইমসের ক্রসওয়ার্ড বা ওয়ার্ডলের ভক্ত হন, তাহলে আপনি সঠিক পথে আছেন। ডঃ হো বলেন, “নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র শেখা বা ধাঁধাঁ সমাধান করা—এসব মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় এবং অবনতি রোধ করে। বিশেষ করে যদি আপনি এমন কিছু শিখতে চান যা আপনি আগে জানতেন না, তাহলে মস্তিষ্কের নতুন সংযোগ তৈরি হয় এবং নতুন উদ্দীপনা পায়।”
৪. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা
বন্ধুত্ব শুধু একাকীত্ব দূর করার জন্য নয়, এটি আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যর জন্য উপকারী। জেরোনটোলজিস্ট ডঃ আইচেনবার্গার বলেন, “আলাপ-আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগ মস্তিষ্ক সচল রাখে এবং একাকীত্বের অনুভূতি কমায়।” ডঃ হো যোগ করেন, “নিয়মিত অর্থবহ সামাজিক সম্পর্ক স্মৃতি হারানো ও বিষণ্নতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।” প্রতিদিন দেখা করা না গেলেও সপ্তাহে বন্ধুকে ফোন করা, লাঞ্চে কফি খাওয়া বা একসাথে হাটা—এসব ছোট ছোট মুহূর্ত বড় সুফল দিতে পারে।
৫. মস্তিষ্কের পুষ্টি দেয় এমন খাদ্য
ডঃ হো বলেন, “সবুজ শাক, বেরি, সম্পূর্ণ শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি যুক্ত খাদ্য দীর্ঘমেয়াদি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। সবুজ শাক ফোলেট ও ভিটামিন কে সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের কোষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেরিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। তৈলাক্ত মাছ ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের প্রদাহ কমায়। বাদামে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড থাকে যা জ্ঞানীয় অবনতির বিরুদ্ধে কাজ করে। সম্পূর্ণ শস্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও মস্তিষ্ককে ধীরে ধীরে জ্বালানি সরবরাহ করে। জলপাই তেল মনোনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ যা রক্তনালীর স্বাস্থ্য রক্ষা করে। অল্প পরিমাণে ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে।” এই খাদ্য তালিকায় মিষ্টি ও নোনতা দুটোই আছে, তাই আপনার প্রিয় খাবার ত্যাগের দরকার নেই।
আবির