পর্যাপ্ত ঘুম না মানেই বিপদ! হারিয়ে যেতে পারে আপনার স্মৃতি

ঘুমের গুরুত্ব নিয়ে ভাবছেন? তাহলে আরেকটি কারণ শুনুন — পর্যাপ্ত গভীর ঘুম না হলে (বিশেষ করে স্লো-ওয়েভ এবং REM ঘুম) মস্তিষ্কের সেই অংশগুলোর ক্ষয় ত্বরান্বিত হতে পারে, যেগুলো আলঝেইমার রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

গভীর ঘুমের অভাবে সংকুচিত হচ্ছে মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল স্কুল অব মেডিসিন-এর গবেষক গাওন চো জানান, “যেসব মানুষের স্লো-ওয়েভ ও REM ঘুম পর্যাপ্ত নয়, তাদের মস্তিষ্কের ‘ইনফেরিয়র প্যারিয়েটাল রিজিয়ন’-এর আকার ছোট হয়ে যায়। এই অংশটি সেন্সরি তথ্য ও ভিজুয়াল স্পেসিয়াল বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে — এবং আলঝেইমারের ক্ষেত্রে এটি প্রাথমিক ক্ষতির লক্ষণ দেখায়।”

 ঘুমের সময়েই মস্তিষ্ক নিজেকে পরিষ্কার করে

REM ঘুমের সময় আমরা স্বপ্ন দেখি, আর তখনই মস্তিষ্ক আবেগ বিশ্লেষণ, স্মৃতি গঠন ও তথ্য সংরক্ষণ করে। অন্যদিকে, গভীর স্লো-ওয়েভ ঘুমে বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার হয় এবং মস্তিষ্ক ও শরীর পুনর্গঠিত হয় পরবর্তী দিনের জন্য।

 ঘুম কম মানেই মস্তিষ্কের ক্ষয় এবং স্মৃতিভ্রংশের আশঙ্কা

অ্যালঝেইমার প্রতিরোধ ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা নিউরোলজিস্ট ড. রিচার্ড আইজ্যাকসন বলেন, “গভীর ঘুমের পরিমাণ ও গুণমানই মস্তিষ্কের আকার এবং মানসিক দক্ষতার পূর্বাভাস দেয়।”

তিনি আরও জানান, ঘুমের মাধ্যমে টক্সিন পরিষ্কার এবং স্মৃতির বিন্যাসের অভাবে আলঝেইমারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 কতক্ষণ ঘুম প্রয়োজন?

• প্রাপ্তবয়স্কদের: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার

• ঘুমের অন্তত ২০%-২৫% সময় REM এবং স্লো-ওয়েভ ঘুম হওয়া উচিত

• বয়স বাড়ার সাথে সাথে গভীর ঘুমের পরিমাণ কমে যায়

 আপনি কীভাবে বাড়াতে পারেন গভীর ঘুম?

• গভীর ঘুম সাধারণত রাতের প্রথমভাগে হয়, আর REM ঘুম হয় ভোরের দিকে

• দেরি করে ঘুমিয়ে ভোরে উঠলে এই দুই স্তরের ঘুম অপর্যাপ্ত হতে পারে

• শুধুই বিছানায় বেশি সময় কাটানো যথেষ্ট নয়, অবিচ্ছিন্ন ও গুণগত ঘুম দরকার

 ভালো ঘুমের জন্য ঘুম স্বাস্থ্য (Sleep Hygiene) বজায় রাখুন:

1. একই সময়ে ঘুমাতে যান ও উঠুন — এমনকি ছুটির দিনেও

2. ঘরের পরিবেশ রাখুন শীতল ও অন্ধকার

3. শব্দ প্রতিরোধ করুন বা সাউন্ড মেশিন ব্যবহার করুন

4. ঘুমের আগে মদ্যপান পরিহার করুন

5. ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন বন্ধ করুন

6. মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম, উষ্ণ গোসল — যেকোনো শান্তিময় অভ্যাস গড়ে তুলুন

চো বলেন,

“ঘুম ভালো করতে হলে নিজেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য কোনো ম্যাজিক ওষুধ নেই।”