ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

উইডোমেকার হার্ট অ্যাটাক: জরুরি উপসর্গ ও করণীয় চিকিৎসা

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৯ জুন ২০২৫

উইডোমেকার হার্ট অ্যাটাক: জরুরি উপসর্গ ও করণীয় চিকিৎসা

হার্ট অ্যাটাকের মধ্যেও কিছু ধরনের অ্যাটাক রয়েছে যেগুলো জীবনহানির ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তেমনই একটি মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের নাম ‘উইডোমেকার’। এটি এমন একটি হৃদ্‌রোগজনিত অবস্থা, যেখানে হৃদয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধমনী ‘লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিসেন্ডিং’ (LAD) সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এই ধমনীটি হৃদপিণ্ডের একটি বিশাল অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। তাই এই ধমনীতে সম্পূর্ণ বাধা তৈরি হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ছাড়া প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা থাকে খুবই কম।

উইডোমেকার হার্ট অ্যাটাক কী?
উইডোমেকার আসলে এক ধরনের ST-Elevation Myocardial Infarction (STEMI), অর্থাৎ এমন হার্ট অ্যাটাক যেখানে করোনারি ধমনী সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। LAD ধমনীটি বাম পাশের হৃদপিণ্ড থেকে শুরু হয়ে সামনের দিক দিয়ে নিচের দিকে চলে যায় এবং হৃদয়ের সামনের, পাশের ও নিচের অংশে রক্ত সরবরাহ করে। এই ধমনীর শুরুতেই যদি ব্লকেজ তৈরি হয়, তাহলে সেটি হৃদয়ের বড় একটি অংশকে অকেজো করে দিতে পারে।বিশেষজ্ঞদের মতে, উইডোমেকার অ্যাটাক মূলত হৃদয়ের বাম ভেন্ট্রিকল বা সবচেয়ে শক্তিশালী কক্ষকে আক্রান্ত করে, যা শরীরজুড়ে রক্ত পাঠায়।

উপসর্গ ও সতর্ক সংকেত
উইডোমেকার হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গগুলো সাধারণ হার্ট অ্যাটাকের মতোই, তবে আরও বেশি তীব্র হতে পারে:
বুকে প্রচণ্ড চাপ, জ্বালাপোড়া বা ভারি অনুভূতি,ব্যথা বাম হাতে,ঘাড়ে, চোয়ালে বা পিঠে ছড়িয়ে পড়া,ঠান্ডা ঘাম,শ্বাসকষ্ট,মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া,বমিভাব বা হঠাৎ দুর্বলতা,পিঠ, কাঁধ বা পেটের ব্যথা।অনেক সময় এই উপসর্গগুলোকে অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক বা ভাইরাসজনিত অসুস্থতা ভেবে গুরুত্ব না দিয়ে দেরি করে ফেলেন, যা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।

কেন এটি এত বিপজ্জনক?
LAD ধমনীর ব্লকেজ পুরো হৃদয়ের রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। ফলে হৃদপিণ্ড দ্রুত অকেজো হয়ে যায় এবং মিনিটে-মিনিটে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। গবেষণা বলছে, সম্পূর্ণ ব্লকেজযুক্ত হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার ২.৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, তবে উইডোমেকার অ্যাটাকে তা আরও বেশি।

জরুরি করণীয় ও চিকিৎসা
উইডোমেকার অ্যাটাক হলে সময়ই সবচেয়ে বড় বিষয়। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা না হলে, প্রাণ বাঁচানো অসম্ভব হয়ে ওঠে।

জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট বসানো (PCI): ধমনীতে জমে থাকা ব্লকেজ সরিয়ে রক্ত চলাচল পুনরুদ্ধার করা হয়।

থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি: নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ব্লাড ক্লট গলিয়ে দেয় এমন ওষুধ দেওয়া হয়।

করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি (CABG): একাধিক ধমনী ব্লক থাকলে শরীরের অন্য ধমনী ব্যবহার করে বিকল্প পথ তৈরি করা হয়।

ঔষধ ব্যবহার:অ্যাসপিরিন, অ্যান্টিকোঅ্যাগুল্যান্ট ও অ্যান্টিপ্লেটলেট ওষুধ,অক্সিজেন থেরাপি,বেটা-ব্লকার, স্ট্যাটিন,বুকে ব্যথা কমাতে নাইট্রোগ্লিসারিন বা মরফিন।

অস্ত্রোপচারের পর কী করবেন?
চিকিৎসার পর সুস্থভাবে জীবন চালাতে হলে কিছু নিয়ম মানা জরুরি:
নিয়মিত ওষুধ সেবন,নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসকের ফলোআপ,কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ,স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পরিমিত ব্যায়াম,ধূমপান ও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস পরিহার।

দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে জীবনধারায় পরিবর্তন
উইডোমেকার হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে ফেরাটা এক বড় শিক্ষা জীবনকে নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ। চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবার ও কাছের মানুষের সহযোগিতা এই পুনরায় জীবন গঠনের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। হৃদয়ের যত্ন নিন, কারণ এটি ক্ষণিকের অবহেলায় থেমে যেতে পারে চিরতরে।

উইডোমেকার হার্ট অ্যাটাক এক নিঃশব্দ ঘাতক। তবে সময়মতো উপসর্গ চেনা, দ্রুত চিকিৎসা ও জীবনধারায় সচেতনতা এই মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনে। হৃদয়ের সংকেতগুলো উপেক্ষা না করে প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্ব দিন। কারণ, হৃদয়ের যত্ন মানেই নিজের জীবনের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া।

 

সূত্র:https://tinyurl.com/34ura3dr

আফরোজা

×