
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া বা হাইপারইউরিসেমিয়া এখন খুব সাধারণ একটি স্বাস্থ্যসমস্যায় পরিণত হয়েছে। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে তা শুরুতে তেমন লক্ষণ না দেখালেও, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে তা কিডনির পাশাপাশি হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মধ্যে বংশগত বা প্রচলিত হার্টের ঝুঁকি নেই, তাদের মধ্যেও ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে হৃদরোগের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তবে সচেতন হলে এবং জীবনযাত্রায় কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই এই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিচে এমন সাতটি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো।
পুরিন-সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন
লাল মাংস, লিভারসহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গজাত খাবার, বেকন, অ্যাঙ্কোভি, সারডিন, স্ক্যালপসহ কিছু সামুদ্রিক মাছের মধ্যে পুরিনের মাত্রা বেশি থাকে। এই উপাদান শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায়। এসব খাবার একেবারে বাদ না দিলেও সপ্তাহে এক-দুবারের বেশি খাবেন না, এবং খাওয়ার পরিমাণ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
অ্যালকোহল কমান বা পরিহার করুন
চিকিৎসকদের মতে, অ্যালকোহলের জন্য ‘নিরাপদ মাত্রা’ বলতে কিছু নেই। বিশেষ করে বিয়ার ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পরিচিত। তাই নিয়মিত পান না করলে অ্যালকোহল একেবারে বাদ দেওয়াই ভালো। এতে কেবল ইউরিক অ্যাসিড কমবে না, হার্টও সুরক্ষিত থাকবে।
শরীরকে পানিশূন্য হতে দেবেন না
শরীরে যথেষ্ট পানি থাকলে কিডনি ইউরিক অ্যাসিড সহজে বের করে দিতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। সাধারণ পানি ভালো না লাগলে লেবু, শসা কিংবা আদা দিয়ে তৈরি ডিটক্স ওয়াটারও পান করতে পারেন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমান। এমনকি ওজন স্বাভাবিক হলেও অতিরিক্ত ওজন যাতে না বাড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার খান
লো-ফ্যাট দুধ, টকদই বা দই, পনির ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখলে ইউরিক অ্যাসিড কমে। এগুলো হার্টের জন্যও উপকারী। চাইলে বাসায় তৈরি করে খেতে পারেন, যাতে ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চিনি ও চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন
সফট ড্রিংকস ও প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা ফ্রুকটোজ ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়। ফলে এসব চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় বাদ দিলে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজনও বেড়ে যায় না।
কফি পান করুন পরিমিতভাবে
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় পানীয় কফির উপকারিতাও আছে। ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৪–৫ কাপ কফি পান করেন, তাদের গাউট বা ইউরিক অ্যাসিডজনিত ব্যথার ঝুঁকি ৪০ শতাংশ কমে যায়। যারা দিনে ৬ কাপ বা তার বেশি কফি খান, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমে ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত। তবে কফি অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিতভাবে পান করাই ভালো।
জীবনযাত্রায় এই পরিবর্তনগুলো যথেষ্ট না হলে, ইউরিক অ্যাসিড কমাতে চিকিৎসক ওষুধও দিতে পারেন। কিছু ওষুধ ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন কমায় বা শরীর থেকে তা বের করে দিতে সাহায্য করে। সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন এবং নিয়মিত হার্ট চেকআপ করান, যেন বিপদ এড়ানো যায়।
সূত্র:https://tinyurl.com/ycxv65df
আফরোজা