
আজকের ব্যস্ত জীবনে নানা মানসিক বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের মধ্যে স্মৃতিশক্তি ধরে রাখা যেন এক বিরল গুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিজ্ঞান বলছে, স্মৃতি শুধু মস্তিষ্কের কাজ নয়—এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে শরীরের সঙ্গেও। আর এখানেই গুরুত্ব পাচ্ছে সোমাটিক এক্সারসাইজ, অর্থাৎ দেহসচেতন ব্যায়াম।
এই ব্যায়ামগুলো শরীর-মনকে সংযুক্ত করে স্নায়ুতন্ত্রকে প্রশমিত করে, যা মস্তিষ্কের সঙ্গে শরীরের যোগাযোগ উন্নত করতে সাহায্য করে। শুধু বই বা ধাঁধা নয়, এখন স্মৃতি বাড়াতে প্রস্তাবিত হচ্ছে দেহভিত্তিক চর্চাও। দেখে নেওয়া যাক এমনই ৫টি সোমাটিক ব্যায়াম, যেগুলো স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে।
১. প্যান্ডিকুলেশন (Pandiculation)
অনেকে এটিকে সাধারণ স্ট্রেচিং মনে করলেও এটি আসলে একধরনের সচেতন সংকোচন ও ধীরে ধীরে মুক্ত করার প্রক্রিয়া। এতে শরীরের সংবেদনশীল ও মোটর স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়, বিশেষ করে মস্তিষ্কের কর্টেক্স অংশ, যা স্মৃতি ও শেখার জন্য জরুরি।
কীভাবে করবেন?
কোনো একটি অংশ যেমন কাঁধ হালকা করে চেপে ধরুন, কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, এরপর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন—সম্পূর্ণ সচেতনভাবে। নিয়মিত করলে এটি স্ট্রেস ও তথ্যভারের কারণে সৃষ্ট মস্তিষ্কের বিশৃঙ্খলা কমায়।
২. ক্রস-ক্রল মুভমেন্টস (Cross-crawl movements)
ডান হাঁটুতে বাঁ কনুই ছোঁয়ানোর মতো বিপরীত অঙ্গের সমন্বিত গতিবিধি দু’পাশের মস্তিষ্ককে একসঙ্গে সক্রিয় করে। এতে করপাস ক্যালোসাম নামক সেতুর মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহ আরও মসৃণ হয়।
উপকারিতা:
রিদমিক ও দ্বিমুখী এই ব্যায়াম শর্ট-টার্ম মেমোরি, মনোযোগ ও প্রতিক্রিয়ার সময় উন্নত করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত করলে ফোকাস ও স্মৃতিধারণ ক্ষমতা বাড়ে।
৩. পেলভিক ক্লক এক্সারসাইজ (Pelvic clock exercise)
পেলভিস হলো মানবদেহের কটিদেশীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পেটের নিচের অংশ এবং উরুর উপরের অংশকে ঘিরে থাকে। এটি একটি বেসিন আকৃতির হাড়ের কাঠামো যা শরীরের উপরের অংশকে নিচের অংশের সাথে সংযুক্ত করে
পেলভিস যেন শরীরের ভারসাম্যের কেন্দ্র। চিৎ হয়ে শুয়ে পেলভিস দিয়ে ঘড়ির কাঁটার মতো বৃত্তাকার নরম গতি করলে সক্রিয় হয় স্যাক্রাল স্নায়ু, যা মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়।
ভূমিকা:
এই ব্যায়ামে ভেগাস নার্ভ সক্রিয় হয়, যা আমাদের স্মৃতি, হৃৎস্পন্দন ও হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চাপের মধ্যে স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে এটি।
৪. স্পাইনাল ওয়েভ মুভমেন্টস (Spinal wave movements)
টেইলবোন থেকে ঘাড় পর্যন্ত ধীরে ধীরে তরঙ্গাকারে চলাচল করলে সক্রিয় হয় সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড। এই তরল মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেয় এবং পরিষ্কার রাখে।
কার্যকারিতা:
মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে গেলে এই তরলের গতি ব্যাহত হয়, ফলে মস্তিষ্কের স্বচ্ছতা কমে যায়। স্পাইনাল ওয়েভ স্মৃতি গঠনের কেন্দ্র ব্রেনস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে। ট্রমা রিলিজেও এটি কার্যকর।
৫. চোখ বন্ধ করে ব্যালেন্স প্র্যাকটিস (Eyes-closed balance work)
দাঁড়িয়ে এক পায়ে চোখ বন্ধ করে ভারসাম্য রক্ষা করা প্র্যাকটিসটি আমাদের proprioceptive system কে সক্রিয় করে, যা আমাদের দেহের ভিতরের অবস্থান সম্পর্কে জানান দেয়।
স্মৃতির সম্পর্ক:
এই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত cerebellum, যা আন্দোলন ও স্মৃতি সমন্বয়ের জন্য কাজ করে। চোখ বন্ধ করে ব্যালান্স করলে এই সংযোগ আরও মজবুত হয়।
সানজানা