ছবি:সংগৃহীত
ভিটামিন B12 আমাদের শরীরের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা, রক্তকণিকা উৎপাদন এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। শরীর নিজে এই ভিটামিন তৈরি করতে পারে না, তাই খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট থেকে গ্রহণ করতে হয়। ভিটামিন B12 প্রধানত প্রাণিজ খাদ্যে পাওয়া যায়, যেমন: মাংস, মাছ, ডিম ও দুধ।
তবুও অনেকেই ভিটামিন B12 এর ঘাটতিতে ভুগছেন, অথচ তার কোনো প্রমাণিত লক্ষণও তাদের জানা নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ও লক্ষণীয় বিষয় হল ‘মস্তিষ্কের কুয়াশা’ বা ব্রেন ফগ, যা একটি মেডিক্যাল টার্ম নয়, তবে মানসিক ঝিমঝিমে ভাব, স্মৃতিভ্রংশ, মনোযোগহীনতা ও বিভ্রান্তি বোঝাতে ব্যবহার হয়।
ভিটামিন B12 এর অভাবে মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে চিন্তা-ভাবনায় ধীরগতি, ভুলে যাওয়া, এবং মানসিক ক্লান্তি দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে ঘাটতি থাকলে তা স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার মতো জটিল অবস্থায় পরিণত হতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
ভিটামিন B12 ঘাটতির লক্ষণ
ভিটামিন B12 এর ঘাটতি শুধুমাত্র ব্রেন ফগ নয়, আরও অনেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- অবসাদ ও দুর্বলতা
- হাত-পায়ে ঝাঁজ অনুভূতি বা অসাড়ত্ব
- ফ্যাকাশে ত্বক
- শ্বাসকষ্ট
- মেজাজ পরিবর্তন ও বিষণ্ণতা
- মানসিক বিভ্রান্তি
এই উপসর্গগুলো অনেক সময় ধীরে ধীরে আসে এবং অন্যান্য অসুস্থতার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতে পারে, তাই সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
ভিটামিন B12 ঘাটতির কারণ
সর্বাধিক সাধারণ কারণ হলো খাদ্যাভাসে ভিটামিন B12 এর অভাব। বিশেষ করে যারা নিরামিষাশী বা ভেগান, তাদের মধ্যে ঘাটতি বেশি দেখা যায়, কারণ ভিটামিন B12 প্রধানত প্রাণিজ খাবারে পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন শারীরিক রোগ, যেমন পের্নিসিয়াস অ্যানিমিয়া, সেলিয়াক ডিজিজ, কিংবা পেটের সমস্যা থাকার কারণে শরীর থেকে ভিটামিন শোষণ কমে যেতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে ভিটামিন শোষণ ক্ষমতা কমে যায়, তাই বয়স্কদেরও ঝুঁকি বেশি থাকে।
চিকিৎসা ও পরীক্ষা
ভিটামিন B12 এর মাত্রা নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। যদি ঘাটতি পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসক সাধারণত ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট বা গুরুতর ক্ষেত্রে ইনজেকশন দিতে পারেন। চিকিৎসা শুরু করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় উন্নতি এবং শক্তি ফিরে আসতে শুরু করে।
ভিটামিন B12 ঘাটতি অনেক সময় আড়ালে থেকে যায়, কিন্তু সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা করালে শরীরের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম পুনরুদ্ধার করা যায়।
মারিয়া
