ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সাটুরিয়ায় খাল দখলের মহোৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২৯ জুন ২০২৫

সাটুরিয়ায় খাল দখলের মহোৎসব

দুই কিলোমিটার খালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে তৈরি করা হয়েছে বাড়িঘর ও পাকা স্থাপনা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শতবর্ষী একটি খাল দখলের মহোৎসব চলছে। সাটুরিয়া বাজারের সিনেমা হল সড়ক থেকে পূর্ব কুষ্টিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার খালের ওপর বাঁধ নির্মাণ করে তৈরি করা হয়েছে বাড়িঘর ও পাকা স্থাপনা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটলেও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এতে খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে হাজার হাজার কৃষক পানি নিষ্কাশন নিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন। বাঁধের কারণে পানি প্রবাহিত না হতে পারায় পানি জমে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময়ের সাটুরিয়ার চন্দ্রখালী নদী থেকে শুরু হয়ে উত্তর কাওন্নারা হয়ে পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের আরেক শতবর্ষী খালে গিয়ে শেষ হওয়া এই খালটি ছিল এলাকার জীবনরেখা। যখন সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না, তখন বর্ষা মৌসুমে ছোট-বড় পালতোলা নৌকায় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়া ও মানুষ চলাচল করত। কৃষকদের শস্য উৎপাদনেও এই খালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু দখলদারদের আগ্রাসনে সেই খাল আজ গতি হারিয়েছে। উপজেলার বালিয়াটি গ্রামের মোহাম্মদ জুলহাস জানান, আগে বর্ষা মৌসুমে বালিয়াটি হয়ে এই খাল দিয়ে তারা সাটুরিয়া হাটে আসতেন।

পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের সোহেল রানা স্মৃতিচারণ করে বলেন, এই খালই ছিল প্রায় সারা বছর একমাত্র যানবাহন, কারণ সাটুরিয়া হাট ছিল আশপাশের সবচেয়ে বড় হাট। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল নৌপথে এনে হাটে বিক্রি করতেন এবং গ্রামের মানুষ সাপ্তাহিক হাটে বাজার করে বাড়ি ফিরতেন।
সাটুরিয়া বাজারের সিনেমা হল সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই খালটির দুপাশে বসবাসকারীরা এক সময় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করতেন। এরপর তারা প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে মাটি ফেলে খাল ভরাট করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। প্রায় ২০-৩০টি বাঁধ দিয়ে দুই কিলোমিটার খালের সম্পূর্ণ প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অনেক স্থান ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, যার ফলে খালের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। উওর কাওন্নারা গ্রামের আক্কাছ আলী অভিযোগ করেন, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খালের পাশ দিয়ে নিয়মিত চলাচল করলেও খাল দখলের বিষয়টি তাদের নজরে আসছে না। মৌখিকভাবে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। তার অভিযোগ, ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী দখলদারদের কাছ থেকে সুবিধা পেয়ে থাকেন। খাল দখল হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা চরম বিপদে পড়েছেন।

সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি, হাজীপুর, কুষ্টিয়া, উত্তর কাওন্নারা ও সাটুরিয়ার কৃষকরা বর্ষা মৌসুমে এই খাল দিয়ে তাদের জমির পানি নিষ্কাশন করতেন। এতে সময় মতো ফসল ফলাতে পারতেন। কিন্তু প্রায় ২০ বছর ধরে খাল দিয়ে পানি প্রবেশ করতে না পারায় ফসল উৎপাদনে বিঘœ ঘটছে। কৃষকদের দাবি, খালটি দ্রুত উদ্ধার করে খনন করা হোক।

সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য শহর আলী জানান, খাল দখলের বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) একাধিকবার চিঠি ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি, দখলদাররা নির্বিঘেœ তাদের দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তার দপ্তরে কোনো অভিযোগ আসেনি।

×