
মঙ্গা তাড়ানো আগাম আমন ধানের চাষাবাদ চলছে কিশোরীগঞ্জে
উত্তরাঞ্চলে রংপুর কৃষি অঞ্চলের আট জেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান রোপণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কৃষকরা বীজতলা তৈরি, জমি প্রস্তুতে মাঠে নেমে পড়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত জুন-জুলাই ও আগস্ট মাসে আমন ধানের চারা রোপণ করেন এবং নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ধান ঘরে তোলেন।
তবে এ অঞ্চলে মঙ্গাজয়ী আগাম জাতের স্বল্পমেয়াদী আমন ধানের চাষ শুরু হয়েছে। বাংলা মাস আশ্বিন ও কার্তিককে (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত) উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বলা হতো মঙ্গা মাস। যার অর্থ অভাবীবস্থা। আমন চারা রোপণ শেষ হলে দরিদ্র শ্রমজীবীদের কাজ না থাকায় তাদের কোনো উপার্জনের ব্যবস্থা থাকে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে এই ক্রান্তিকালে তাদের অর্ধাহার-অনাহারে থাকতে হতো।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিআরআরআই) গবেষণায় আবিষ্কার মঙ্গাজয়ী স্বল্পমেয়াদী আমন ধান ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৫৭, বিনা ধান-৭ সহ অন্যান্য কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের কারণেই আশ্বিস কার্তিক মাসে মানুষের ঘরে ঘরে আগাম ধান উঠে আসে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন জাতের ধানগুলো রোপণের পর মাত্র ৯০-১০০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পেকে যায়। অথচ প্রচলিত জাতের গতানুগতিক ধানগুলো রোপণের প্রায় ১৪০-১৫০ দিন পর অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বরে পাকে। নতুন জাতের ধান আগেভাগে কাটা যায় বলে কৃষক দুই মাস আগেই তাদের জমি খালি পেয়ে যান। ফলে তারা প্রথমবার আগাম জাতের আলু আবাদ করে, দ্বিতীয়বার আবার আলু কিংবা অন্য যে কোনো রবি ফসল আবাদ করতে পারেন। ফলে এখন সেই অভাব এ অঞ্চলে আর চোখে পড়ে না।
কৃষি বিভাগ মতে, চলতি বোরো ধান মৌসুমে এ অঞ্চলে বাম্পার ধান উৎপাদন হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার ৯৭৮ হেক্টরে সেখানে চাষ হয় ৫ লাখ ৯ হাজার ৫৬ হেক্টরে। প্রতি হেক্টরে চালের গড় উৎপাদন ধরা হয় ৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে ২২ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। এ ছাড়াও এ বছর ইরি-বোরো ধানের ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা।
এ ছাড়া গত মৌসমে এ অঞ্চলের আমনের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। রংপুর কৃষি অঞ্চলের রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের ৫ জেলায় ৬ লাখ ২৭৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছিল। উৎপাদন হয় ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন চাল। পাশাপাশি কৃষকরা আমনের দামও পায় ভালো। এবার চলতি মৌসুমে ব্যাপকভাবে আমন ধানের চারা রোপণ প্রস্তুতি নিয়েছে চাষিরা। এরই মধ্যে আমন চাষকে ঘিরে মাঠে মাঠে যেন এখন উৎসব শুরু হয়েছে। বিশেষ করে এখন (জুন) আগাম আমন চাষের চারা রোপণ চলছে। আর মূল আমনের চারা রোপণ আগস্ট মাস পর্যন্ত চলছে।
রবিবার রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলামের চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস ছিল। দিনভর ছিল তার অফিসে কর্মব্যস্ততা। তার মাঝেও তিনি জানালেন, রংপুর কৃষি অঞ্চলের চলতি আমন মৌসুমের তথ্য। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে রংপুর জেলায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় এক লাখ ৩৩ হাজার ১২০ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় এক লাখ ২০ হাজার ৫শ’ হেক্টর, লালমনিরহাট জেলায় ৮৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও নীলফামারী জেলায় এক লাখ ১৩ হাজার ২২০ হেক্টর। তিনি আরও বলেন, এই পরিমাণ জমিতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর (২০২৫) ধরা হয়েছে ২০ লাখ ১০ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন।
এই পরিমাণ জমিতে আমন চাষ করতে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। বীজতলার কাজ দ্রুত চলছে। পাশাপাশি মঙ্গা তাড়ানো আগাম আমন ধান রোপণ করছে কৃষকরা। তিনি জানান, বিগত সময়ের ন্যায় এবারও আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।