
ছবিঃ সংগৃহীত
বুকের ব্যথা—গুরুত্বহীন এক সমস্যা না কি মৃত্যুর আশঙ্কা? অনেক সময় গ্যাসের কারণে বুকের অস্বস্তি হয়, আবার একই ধরনের অস্বস্তি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণও হতে পারে। ফলে মানুষ দ্বিধায় পড়ে যায়: “এটা কি শুধু গ্যাস, না কি হার্ট অ্যাটাক?” দুটি সমস্যার উপসর্গ প্রায়ই মিল থাকে—বুকের চাপ, বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। কিন্তু গ্যাস হতে পারে সাময়িক অস্বস্তি, আর হার্ট অ্যাটাক প্রাণঘাতী।
তাহলে কীভাবে বুঝবেন, কোনটি গ্যাস আর কোনটি হার্ট অ্যাটাক?
কেন উপসর্গগুলো একরকম মনে হয়?
বুকের মধ্যে রয়েছে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও বহু স্নায়ু—সব একসঙ্গে। তাই যখন এসব অঙ্গের যেকোনো একটি সমস্যায় পড়ে, তা অনেক সময় একই ধরনের অনুভূতি তৈরি করে।
পেটে আটকে থাকা গ্যাস উপরের দিকে চাপ সৃষ্টি করে বুকের চাপ বা টাইটনেসের অনুভূতি তৈরি করতে পারে, যা অনেকটা হার্ট অ্যাটাকের মতোই লাগে। আরও বিভ্রান্তিকর বিষয় হলো—উভয় ক্ষেত্রেই বমি ভাব, ঘাম, মাথা ঘোরা, এমনকি চোয়াল বা পিঠে ব্যথাও হতে পারে।
তবে চিন্তার কিছু নেই—নিচের কিছু বিষয় লক্ষ্য করলেই আপনি আলাদা করতে পারবেন।
ক্লু #১: ব্যথা কোথায়?
গ্যাসের ব্যথা সাধারণত পেটের ওপরের দিকে বা মাঝামাঝি স্থানে হয়। এটি চলাফেরার সময় স্থান পরিবর্তন করতে পারে এবং গ্যাস বা ঢেঁকুর উঠলে আরাম লাগে।
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে হয়, চাপ, সংকোচন বা ভারী লাগার মতো অনুভূতি হয়। মনে হতে পারে, কেউ বুকের ওপর বসে আছে। ব্যথা বাম হাত, গলা, চোয়াল বা পিঠেও ছড়িয়ে যেতে পারে। চলাফেরা বা ঢেঁকুরেও এটি যায় না।
সারাংশ: গ্যাসের ব্যথা এদিক-ওদিক সরতে পারে, হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা থাকে জমাট এবং বাড়তেই থাকে।
ক্লু #২: ব্যথার ধরণ কেমন?
গ্যাসের ব্যথা হয়ত চাঁচাছোলা, ক্র্যাম্প জাতীয়, অথবা টুকটাক কষ্টদায়ক—বিশেষ করে বেশি খাওয়ার পরে।
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা হয় চেপে ধরা, জ্বালাপোড়া, বা টানাটানির মতো। অনেক সময় মনে হয়, আপনি নিশ্বাস নিতে পারছেন না, কথা বলতে পারছেন না। ব্যথা এক জায়গা থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
হার্ভার্ড হেলথের মতে, যেসব উপসর্গ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ:
-
বুকের মাঝখানে চাপ, সংকোচন, জ্বালাপোড়া, পূর্ণতা বা ব্যথা
-
এক বা উভয় হাতে, পিঠ, গলা, চোয়াল বা পেটে অস্বস্তি
-
শ্বাসকষ্ট
-
হঠাৎ বমি ভাব বা বমি
-
মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা
-
অস্বাভাবিক ক্লান্তি
-
ঘাম হওয়া বা শরীর গরম লাগা
যদি মনে হয় কেউ আপনার বুককে চাপ দিয়ে ধরছে—তবে দেরি নয়, এটা আর গ্যাস নয়, এটি হতে পারে জীবন-মরণ প্রশ্ন।
ক্লু #৩: সাথে আর কী উপসর্গ আছে?
গ্যাস হলে আপনি পেতে পারেন:
-
ঢেঁকুর বা বাতাস ছাড়ার প্রবণতা
-
পেট ফাঁপা
-
গাঁ গাঁ শব্দ
-
নড়াচড়ায় আরাম পাওয়া
হার্ট অ্যাটাক হলে লক্ষ্য করুন:
-
ঠান্ডা ঘাম
-
শ্বাসকষ্ট
-
মাথা ঘোরা
-
বমি ভাব বা বমি (বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে)
-
অজানা ভয় বা “মনে হচ্ছে কিছু একটা খুব খারাপ হতে যাচ্ছে” এমন অনুভূতি
প্রো টিপ: যদি আপনার শরীর যেন ‘অ্যালার্ট মোডে’ চলে যায়—ঘাম, মাথা ঘোরা, আতঙ্ক—তবে ধরে নিন এটা গ্যাস নয়।
হার্টবার্নও কি হার্ট অ্যাটাকের মতো লাগে?
হ্যাঁ, সেটাই সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর।
হার্টবার্ন হয় পেটে অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে আসলে। এতে বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়া, চাপ লাগা ধরনের ব্যথা হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের মতোই লাগে।
তবে পার্থক্য আছে:
-
হার্টবার্ন সাধারণত খাওয়ার পরে হয়, শোয়ার সময় বাড়ে এবং অ্যান্টাসিডে আরাম দেয়।
-
হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা অ্যান্টাসিডে যায় না, এবং আপনি কোন অবস্থায় আছেন তাতে কিছু যায় আসে না।
নির্দেশনা: যদি বুঝতে না পারেন—তবে ধরে নিন এটা হার্ট অ্যাটাক এবং সাহায্য নিন। ভুল হলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু দেরি বিপজ্জনক।
বিশেষ সতর্কতা নারীদের জন্য
নারীদের হৃদরোগের উপসর্গ অনেক সময় "ক্লাসিক" হয় না। মানে বুকের তীব্র ব্যথা নাও থাকতে পারে। বরং দেখা দিতে পারে:
-
বমি ভাব বা বমি
-
চরম ক্লান্তি
-
পিঠ, গলা বা চোয়ালে ব্যথা
-
মাথা ঘোরা
-
দুশ্চিন্তা বা অস্বাভাবিক অনুভূতি
তাই নারীদের হার্ট অ্যাটাক অনেক সময় ভুল করে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা মানসিক চাপ ধরে নেওয়া হয়।
কখন সাহায্য চাইবেন?
সুবর্ণ নিয়ম: যদি একটুও সন্দেহ হয়—তৎক্ষণাৎ জরুরি সেবা ডাকুন। “দেখি পরে কেমন লাগে” বলে অপেক্ষা করা উচিত নয়। প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে সাহায্য ডাকুন যদি:
-
ব্যথা ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়
-
বিশ্রাম বা অ্যান্টাসিডে না কমে
-
শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বমি বা মাথা ঘোরে
-
হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে
সারকথা: বুকের অস্বস্তিকে কখনো হালকা করে দেখবেন না। শরীর যদি সংকেত দেয়—গভীরভাবে শুনুন। কারণ হার্টের ক্ষেত্রে একটু বেশিই সাবধান হওয়া ভালো, না হলে তা হতে পারে অনেক দেরি।
ইমরান