টেডি বিয়ার শুধু খেলনা নয়, ঘুমের থেরাপি! বিজ্ঞানও তাই বলছে

ম্যাক্স জেনেকভ ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির পিএইচডি প্রার্থী, একজন বাবা, এবং একই সঙ্গে একজন স্টাফড অ্যানিমাল বা নরম খেলনা পশুর মালিক।

“শৈশব থেকে এগুলো আমার ছিল, ওদের নিয়ে আমার একটা বিশাল কল্পনার জগত ছিল,” তিনি বলেন। “আমি মনে করি এগুলো খুব সুন্দর, কোমল কিছু জিনিস।”

তিনি এখনো তাঁর শৈশবের একটি প্লাশ র‌্যাকুন সংরক্ষণ করে রেখেছেন, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়দের বাচ্চা হলে নিজ হাতে ক্রোশিয়া করে স্টাফড খেলনা তৈরি করেন এবং মাঝেমধ্যে এখনো একটি খেলনা জড়িয়ে ধরে বা বালিশ হিসেবে ব্যবহার করে ঘুমান।

এটা অস্বাভাবিক শোনাতে পারে, কিন্তু ভেবে দেখলে—আসলে কি সত্যিই অস্বাভাবিক?

প্রাপ্তবয়স্করাও খেলনা কেনে

কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্লাশ খেলনার বিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালে, মার্কিন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সারকানার তথ্য অনুযায়ী, বিক্রি হওয়া সমস্ত প্লাশ খেলনার ২১ শতাংশই ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের কাছে বিক্রি হয়েছে।

“মহামারির সময়ে এই স্টাফড খেলনাগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিনোদন, সংগ্রহ এবং মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম হিসেবে গভীরভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে,” জানান সারকানার যুক্তরাষ্ট্রের টয়স ইন্ডাস্ট্রির উপদেষ্টা জুলি লেনেট।

বিল্ড-আ-বেয়ার ওয়েবসাইটে এখন প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একেবারে আলাদা একটি বিভাগ আছে। কোম্পানির একটি জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি মানুষ তাদের শৈশবের একটি স্টাফড অ্যানিমাল এখনো সংরক্ষণ করে রেখেছে এবং প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এখনো একটি টেডি বিয়ার বা স্টাফড খেলনা জড়িয়ে ঘুমায়।

আত্মিক প্রশান্তির খোঁজ

“আমি ভাবছি, অনিশ্চয়তার সময়ে মানুষ হয়তো একটু বেশি সান্ত্বনার খোঁজ করছে,” বললেন ডা. জেড উ, ডারহাম, নর্থ ক্যারোলিনায় অবস্থিত থ্রাইভ স্লিপ ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্লিপ সাইকোলজিস্ট। যারা একা থাকে তাদের জন্য রাতে জড়িয়ে ধরার মতো কিছু থাকা মানসিকভাবে প্রশান্তি দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাপ্তবয়স্করা স্টাফড অ্যানিমাল রাখলে কিংবা তা ব্যবহার করে ভালো ঘুম পেলে তা একদমই অস্বাভাবিক বা শিশুসুলভ আচরণ নয়—বরং এতে অনেক ইতিবাচক প্রভাব থাকে।

স্টাফড অ্যানিমাল কেবল ট্রমা নয়, ভালোবাসার প্রতীক

সিয়াটলের একজন মানসিক স্বাস্থ্য থেরাপিস্ট ডা. জেসিকা লামার বলেন, তিনি প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের সাথে স্টাফড অ্যানিমাল ব্যবহার করেন যারা শৈশবের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে কাজ করছেন।

“তারা বিল্ড-আ-বেয়ারে গিয়ে এমন একটি স্টাফড অ্যানিমাল তৈরি করেন যেটি তাদের ‘ইনার চাইল্ড’ বা ভেতরের শিশুকে প্রতিনিধিত্ব করে। তারপর সেটার মাধ্যমে তারা শৈশবের অসম্পূর্ণ আবেগগুলো পূরণ করেন।”

এমন একটা খেলনা, যা তারা নিজেরাই বানান এবং ভালোবাসা, যত্ন ও স্নেহ দিয়ে জড়িয়ে ধরেন—তা তাদের জন্য ছিল না এমন সময়ে—এটা মানসিকভাবে অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে।

কিন্তু স্টাফড অ্যানিমাল কেবল ট্রমার জন্য নয়। যে কোনো মানুষ এর কোমলতা ও আত্ম-সান্ত্বনার গুণাগুণ থেকে উপকার পেতে পারে, বলেন জেনেকভ।

ডা. লামার বলেন, এটি নস্টালজিয়া, পরিবার বা দূরের কারও সঙ্গে সম্পর্ক এবং সুখস্মৃতির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারে।

"স্টাফড অ্যানিমাল ব্যবহার শিশুতোষ নয়"

অনেকে মনে করে, টেডি বিয়ার তো শিশুদের জন্য। এ প্রসঙ্গে ডা. লামার বলেন, “যদি আমরা বিষয়টিকে একজন সুস্থ, ভারসাম্যপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে দেখি, তাহলে শিশুসুলভ স্মৃতির সঙ্গে সংযোগ রাখা অত্যন্ত মূল্যবান।”

হয়তো সমস্যা হতে পারত যদি কেউ তার খেলনার অনুপস্থিতিতে গভীর দুশ্চিন্তায় ভুগত বা ঘুমাতে পারত না। অথবা যদি কেউ স্টাফড অ্যানিমালকে ব্যবহার করে বাস্তব সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলতে চাইত। তবে এমন ঘটনা বাস্তবে খুব একটা দেখা যায় না বলে জানান ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট ডা. বারবারা গ্রিনবার্গ।

বরং এটা শিশুদের শেখানোর একটি ভালো উপায় হতে পারে—কীভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণ বা আত্ম-সান্ত্বনা (self-soothe) করতে হয়।

“ছেলেদেরও প্রয়োজন এমন প্রশান্তি”, বলেন গ্রিনবার্গ। “তাদেরও তাদের খেলনা রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত।”

ঘুমের সঙ্গী হিসেবে টেডি বিয়ার

ডা. উ বলেন, মানুষের শারীরবৃত্তীয় চাহিদার কারণেও টেডি বিয়ার বা স্টাফড অ্যানিমাল ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।

“আমরা বিবর্তনের ধারায় গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে বেঁচে থাকতে শিখেছি। আমরা তখনই সবচেয়ে ভালো ঘুমাতে পারি, যখন নিরাপদ অনুভব করি। তাই কেউ একা থাকলে, এমন একটি জিনিস—যেটা জড়িয়ে ধরা যায়—ঘুমে নিরাপত্তার অনুভূতি দিতে পারে।”

ডা. লামার বলেন, জন্মের আগে গর্ভেই শিশুরা সবচেয়ে নিরাপদ থাকে, তারপর শিশুকালে আমরা সাদরে পেঁচিয়ে ঘুম পাড়াই—সেই আত্মিক সংযোগ বা ছোঁয়ার চাহিদা পুরোপুরি কখনোই মুছে যায় না।

ওজনযুক্ত স্টাফড অ্যানিমালও রয়েছে, যেগুলো একটু চাপ দেয় গায়ে, যা weighted blanket-এর মতো কাজ করে।

“গবেষণায় দেখা গেছে, weighted blanket মন ও শরীরকে শান্ত করতে সাহায্য করে। স্টাফড অ্যানিমালও একই রকম ভূমিকা রাখতে পারে,” বলেন ডা. উ।

অন্তত এটুকু বলা যায়, একটি প্রিয় খেলনা মস্তিষ্ককে সংকেত দেয়—এখন বিশ্রামের সময়।

“এর গন্ধ, স্পর্শ বা চেহারা ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে এবং মস্তিষ্কে ঘুম আসার সংকেত দেয়,” বলেন ডা. উ।

যেভাবেই ব্যবহার করুন—শেলফে সাজানো, আলমারিতে রাখা কিংবা রাতে বিছানায় পাশে রাখা—স্টাফড অ্যানিমাল যদি ঘুমের মান ভালো করে তোলে, তাহলে তা দারুণ ব্যাপার, বলেন গ্রিনবার্গ।

“যদি এটা আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়, তবে এটা ঘুমের ওষুধ বা এক গ্লাস ওয়াইনের চেয়ে অনেক ভালো বিকল্প। এবং এতে কারও কোনো ক্ষতি হয় না।”