
হ্যাঁ, কিছু মানুষ এখনও কাঁধে করে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে বেড়ান। গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে যেখানে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা রয়েছে, সেখানে এই দৃশ্য দেখা যায়। এটি তাদের জীবিকা নির্বাহের একটি উপায়।
এইভাবে কাঁধে করে মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করা একটি ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য, যা এখনও কিছু কিছু গ্রাম এলাকায় দেখা যায়।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের সরকার তারী (পালপাড়া) এলাকার উৎপল পাল। পূর্বপুরুষের পেশাকে আজও আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি। তাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে এখনও তৈরি করছেন কাদামাটির এসব পণ্যসামগ্রী।
১০ বছর বয়সে বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই উৎপল পাল মৃৎশিল্পের এই ব্যবসায় নিয়োজিত হন। বর্তমানে বয়স ৭০ ছাড়িয়েছে।
মাটি দিয়ে তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, থালা-বাসন, সরা বিক্রি করেই সংসার চলে তার।
জীবনের সায়াহ্নে এসেও মৃৎশিল্পের পেশাকে জীবনের সঙ্গী বলেই মনে করেন তিনি।
৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ প্রতিদিন ভোর হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। মাটিকে ভালোবেসেই পার করে দিচ্ছেন একটা জীবন।
উৎপল পালের সংসারে রয়েছে স্ত্রী-সন্তানসহ আরও অনেকেই। মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে দেন পরিবারের লোকেরা, আর তিনি কোনো না কোনো স্থানে ছুটে যান সেগুলো বিক্রি করতে। নিজ গ্রাম থেকে প্রতিদিনই কাঁধে করে এসব মাটির তৈরি জিনিস নিয়ে গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরদূরান্তে হেঁটে হেঁটে এগুলো বিক্রি করেন।
কথা প্রসঙ্গে উৎপল পাল বলেন, “মাটির জিনিসপত্র বিকাইতে মোর কেনেবেলা খুব ভালো লাগে। তাই আজও ছাড়বার পাম নাই। হামরা বাড়িতেও আমি মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার করি।”
আজ রবিবার সকালে দেখা গেল, গাইবান্ধা ফুলবাড়ী ফকিরপাড়া গ্রামে ছুটে চলেছেন উৎপল পাল। পথিমধ্যে দেখা যাচ্ছিল, গ্রামে বসবাসরত নারীরা কিনছিলেন বাটনা, হাঁড়ি, পাতিল। কাঁধে ভার বহনের কারণে তাকে দূর থেকে কিছুটা কুঁজো মনে হচ্ছিল।
কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “প্রায় ৬০ বছর ধরে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে জিনিসপত্র রেডি করে বাড়ি থেকে বিভিন্ন গ্রামে ছুটে যাই। সপ্তাহে পাঁচ দিন, দু’দিন বাড়িতে থেকে অন্য কাজ করি।”
উৎপল পাল বলেন, “সারাদিনে বিক্রি করতে পারলে মোটামুটি ৫০০–৭০০ টাকায় সবগুলো মাটির জিনিস বিক্রি করা সম্ভব হয়। তাতে দৈনিক ৩০০–৪০০ টাকা গড়ে আয় হয়। কিন্তু বর্তমান বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম, এই আয়ে কোনোভাবে সামলাতে পারি না। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদাও কমেছে। কোনো রকম কষ্ট করে সংসার চলছে।”
ফুলবাড়ী ফকিরপাড়া এলাকার স্থানীয় শিক্ষক তাজুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “এই উৎপল দা’কে আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, কাঁধে করে এভাবেই তিনি মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করেন। যদিও এখন মাটির হাঁড়ি-পাতিলের প্রচলন কমে গেছে, তবুও গ্রামাঞ্চলে কিছু মানুষ এখনও কেনে, তাই হয়তো তার ব্যবসাটা টিকে আছে। আমি মনে করি, সরকারের তরফ থেকে তাকে যদি একটা মুদি দোকান করে দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো এই বৃদ্ধ বয়সে তাকে আর এত কষ্ট করে ভার বহন করতে হবে না।”
সানজানা