
বিশ্বাসে ফাটল ধরলে অনেকেই ধরে নেন সম্পর্ক আর টিকবে না
প্রতিটি মানুষ ভুল করতে পারে, আবার সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবর্তনও সম্ভব। সম্পর্কের জটিল সময়ে দুজন যদি আন্তরিক থাকেন, পরস্পরের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করেন এবং সমস্যার সমাধানে একসঙ্গে কাজ করেন তবে বিশ্বাস পুনর্গঠন শুধু সম্ভবই নয়, বরং সম্পর্ক আরও গভীর ও দৃঢ় হতে পারে। মনে রাখতে হবে, ভালোবাসা, সম্মান এবং সময়ই একটি সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখার মূল চাবিকাঠি। ধৈর্য, ভালোবাসা আর আন্তরিক চেষ্টার মাধ্যমে সম্পর্ককে আগের মতোই বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব।
বিশ্বাসে ফাটল ধরলে অনেকেই ধরে নেন সম্পর্ক আর টিকবে না। অনেকে আবার বলেন বিশ্বাস নষ্ট হলে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তবে মনোবিদরা বলছেন, বিশ্বাস হারালেও সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় বিষয়টা এমন না। যদি সঠিক পদক্ষেপ নেয়া যায় তাহলে দুজনের সম্পর্ক আগের মতো মজবুত হতে পারে।
ম্যারেজ ডটকমের প্রতিবেদনে মনোবিদরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলেছেন। বিভিন্ন গবেষণা নিয়েও আলোচনা করেছেন তারা। বিশ্বের বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশ্বাস গড়তে এবং ধরে রাখতে সময়, আন্তরিকতা ও ধারাবাহিক চেষ্টা প্রয়োজন। যখন দুইজন মানুষ একে অপরের সঙ্গে খোলামেলা, সৎ ও আন্তরিক থাকেন, তখনই সম্পর্ক হয় গভীর এবং টেকসই। তবে যেই মুহূর্তে সন্দেহ, গোপনীয়তা বা প্রতারণার ছায়া পড়ে—সেখান থেকেই শুরু হয় টানাপোড়েন।
কেন বিশ্বাস ভাঙে?
বিশ্বাসের সমস্যার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অতীতের কোনো প্রতারণার অভিজ্ঞতা, অতিরিক্ত গোপনীয়তা, যোগাযোগের অভাব কিংবা একে অপরের প্রতি আগ্রহের ঘাটতি—সবকিছুই বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে। অনেক সময় কেউ আগেও বারবার প্রতারিত হয়েছে বলেই নতুন সম্পর্কে মন খুলে আস্থা রাখতে পারে না। মনোবিদদের মতে, প্রথমেই নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত “আমার সঙ্গী কি সত্যিই বিশ্বাসযোগ্য?” এরপরই বুঝে নিতে হবে, সমস্যা কোথায় এবং কেন তৈরি হয়েছে।
যেসব লক্ষণে বোঝা যায় বিশ্বাসে ফাটল ধরেছে: মনোবিদরা বেশ কিছু লক্ষণের উল্লেখ করেছেন যেসব দেখলে বুঝতে হবে বিশ্বাসে ফাটল ধরেছে। এগুলো হলো:
সঙ্গীকে বারবার মিথ্যাবাদী মনে হওয়া।
অতীতের ব্যর্থ সম্পর্কের প্রভাব বর্তমান সম্পর্কে পড়া।
সঙ্গীর বন্ধু বা পরিচিতদের সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা।
সঙ্গীর অতিরিক্ত গোপন আচরণে অস্বস্তি বোধ করা।
বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার উপায়:
বিশ্বাস পুনর্গঠন সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। ধৈর্য, সহানুভূতি এবং খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক আবারও শক্তিশালী করা যায়। নিচে কিছু কার্যকর কৌশল দেয়া হলো:
খোলামেলা কথা বলা: সমস্যা এড়িয়ে না গিয়ে মুখোমুখি হন। কোন বিষয়টি আপনার মধ্যে সন্দেহ তৈরি করছে তা বিনয়ের সঙ্গে জানানো জরুরি।
প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করুন: দুইজনের প্রতিদিনের ছোট ছোট অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে একে অপরের জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হয়। এতে বিশ্বাস বাড়ে।
সঙ্গীর গুরুত্ব বুঝিয়ে দিন: ছোট ছোট কথায় বা আচরণে বুঝিয়ে দিন—তারা আপনার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের মানসিক আশ্বাস সম্পর্ককে স্থিতিশীল করে।
বন্ধু ও পরিচিতদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন: আপনার ঘনিষ্ঠ মানুষদের সঙ্গে সঙ্গীকে পরিচয় করিয়ে দিলে সে আপনার জীবনে নিজের অবস্থান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বোধ করবে।
সঙ্গীর দৃষ্টিকোণ বোঝার চেষ্টা করুন: কোনও সমস্যা হলে নিজের দিক না দেখে একবার তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করুন। এতে ভুল বোঝাবুঝি কমবে এবং বিশ্বাস ফিরতে শুরু করবে।
যদি সম্পর্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অবিশ্বাস, দ্বিধা বা টানাপোড়েন চলতে থাকে, তাহলে একজন পেশাদার মনোবিদ বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে পারেন। তারা সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন, যা আপনার সম্পর্ককে আবার সুস্থ করে তুলতে পারে।
তাসমিম