
ফোন স্ক্রলিংয়ের নেশা
চোখ-মাথা-মস্তিষ্ক সব কিছুতেই যেন ঢেউ তুলে দেয় ফোনের স্ক্রল। কয়েক মিনিটের জন্য ফোন হাতে নিলেও সেটা ঘণ্টায় গড়ায়-এটাই আজকের বাস্তবতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ‘অবিরাম স্ক্রলিং’ নেশার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। স্নায়ুবিজ্ঞান বলছে, এর পেছনে কাজ করে আমাদের মস্তিষ্কের পুরস্কারপ্রিয়তা এবং কৌতূহলী স্বভাব।
কেন স্ক্রলিং এতোটা আসক্তিকর?
লিডস্ বেকেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এইলিশ ডিউক জানান, ফোন হাতে নেওয়া এবং স্ক্রল করা এখন স্বয়ংক্রিয় অভ্যাসে রূপ নিয়েছে। যেমন, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় দরজা বন্ধ করা।
এন ওয়াই ইউ-এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আরিয়েন লিং বলেন, আমাদের মস্তিষ্ক নতুন কিছুর খোঁজে থাকে সবসময়। সামাজিক মাধ্যমে সেই ‘নতুনতা’ অবিরাম আসতেই থাকে-ফলে, মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সার্কিট’ আবারো সেই আনন্দ পেতে চায়।
বিশেষত কিশোর-তরুণদের মস্তিষ্কে যুক্তিনির্ভর অংশ (প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স) এখনও পরিপূর্ণভাবে গঠিত না হওয়ায়, তারা স্ক্রলিংয়ে সহজেই ডুবে যায়।
সময়জ্ঞান হারানো এক ফাঁদ
অধ্যাপক ডিউক জানান, স্ক্রলিংয়ের সময় অনেকেই ‘ফ্লো স্টেট’-এ চলে যান-যেখানে সময়, পরিবেশ বা নিজের অবস্থাও টের পান না। টিকটকের মতো অ্যাপগুলো ব্যবহারকারীর পছন্দমতো কনটেন্ট সরবরাহ করে বলে মনোযোগ আটকে পড়ে সহজেই।
মুক্তির ৩ উপায়
এই নেশা থেকে মুক্তি পেতে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন তিনটি কার্যকর পরামর্শ
১. নির্দিষ্ট সময় স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা
ফোন ছাড়া হাঁটতে বের হোন, ব্যায়াম করুন কিংবা জিমে যান। এতে মন ও মস্তিষ্ক উভয়েই বিশ্রাম পাবে।
২. বাস্তব জগতে সময় কাটানো
ঘড়িতে সময় দেখুন, অফলাইনে পড়ুন, বন্ধুদের সাথে সরাসরি মেলামেশা করুন। ফোনে যা করতেন, তার বিকল্প খুঁজে বের করুন বাস্তবে।
৩. অভ্যাস নিয়ে সচেতনতা
ফোন হাতে নেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন- ‘আমি কেন ফোনটা নিচ্ছি?’ ক্ষুধা যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তেমনি ডোপামিনের এই তাড়নাও সামলানো সম্ভব। নিজেকে বোঝান, ‘ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু না দেখলেও তো চলে!’
খবর বিবিসি বাংলা
তাসমিম