
ছবি: প্রতীকী
বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা যেখানে ৮২০ কোটিরও বেশি, সেখানে অতীতে এক সময় এমনও ছিল যখন গোটা মানবজাতি ছিল বিলুপ্তির মুখে। সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, প্রায় ৯ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা কমে মাত্র ১,২৮০ জনে এসে দাঁড়িয়েছিল। অর্থাৎ, প্রায় ৯৮.৭ শতাংশ মানুষ হারিয়ে গিয়েছিল।
গবেষণায় বলা হয়, এ ঘটনা মানব ইতিহাসে এক ভয়াবহ ‘বটলনেক’ বা সংকোচনকালীন অধ্যায়, যা প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার বছর স্থায়ী ছিল।
গবেষকরা জানান, তারা বর্তমান মানুষের ৩,১৫৪টি পূর্ণ জিনোম বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে এই ফলাফল পেয়েছেন। পরিসংখ্যানিক পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সে সময় এতটাই জনসংখ্যা কমে গিয়েছিল যে প্রজাতিগত টিকে থাকার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল।
গবেষকদের মতে, এই সংকটজনক সময়ই পরবর্তীতে নতুন হোমিনিন প্রজাতির উত্থানের পথ তৈরি করে দেয়, যার ধারাবাহিকতায় উদ্ভব ঘটে নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষের।
কেন ঘটেছিল এই গণবিলুপ্তি?
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এ সময়কালটি ছিল মধ্য-প্লাইস্টোসিন রূপান্তর নামে পরিচিত—এক ভয়াবহ জলবায়ুগত পরিবর্তনের সময়। তখন পৃথিবীর বেশিরভাগ অংশ ছিল অত্যন্ত ঠান্ডা ও শুষ্ক, বিশেষ করে আফ্রিকার আবহাওয়া হয় খুব প্রতিকূল।
চীনের ইস্ট চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. ই-হুয়ান প্যান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষের প্রজাতি ইতিহাসে এক চরম সংকটে পড়েছিল। কিন্তু সেই সংকটই পরবর্তীতে মানুষের বিবর্তনের এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।’
গবেষণা দলে থাকা আরেক বিজ্ঞানী ই-হুসুয়ান প্যান বলেন, ‘এই আবিষ্কার নতুন করে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কীভাবে মানুষ সেই সময়কার বিপর্যয়কর জলবায়ু পরিবর্তন কাটিয়ে উঠেছিল? প্রকৃতি কীভাবে মস্তিষ্কের বিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছিল?—এসব প্রশ্ন এখনো আমাদের সামনে উন্মোচিত রয়ে গেছে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই গবেষণা শুধু মানব বিবর্তনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজনই নয়, বরং আজকের বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রজাতির টিকে থাকার সংকট বুঝতেও এটি নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব