ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

বিচ্ছুর বিষ থেকে তৈরি হবে ক্যান্সারের প্রতিষেধক!

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২৯ জুন ২০২৫

বিচ্ছুর বিষ থেকে তৈরি হবে ক্যান্সারের প্রতিষেধক!

ছবি: প্রতীকী

বিষই এবার হতে পারে জীবন বাঁচানোর পথ! স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছেন ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা। অ্যামাজনের একধরনের কাঁকড়াবিছার বিষ থেকে সংগ্রহ করা একটি বিশেষ অণু—BamazScplp1—স্তন ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে দাবি করেছেন তারা।

সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, Brotheas amazonicus নামের এই বিচ্ছুর বিষে থাকা অণুটি পরীক্ষাগারে স্তন ক্যান্সার কোষের ওপর প্রয়োগ করে আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, এই অণুর প্রতিক্রিয়া বহুল ব্যবহৃত কেমোথেরাপি ওষুধ Paclitaxel-এর মতোই কার্যকর।

বিষের এই অণুটি বিচ্ছু থেকে সরাসরি সংগ্রহ না করে গবেষকরা বেছে নিয়েছেন ‘heterologous expression’ নামের একটি জিনপ্রযুক্তি পদ্ধতি। এর মাধ্যমে বিষ তৈরির জন্য দায়ী জিন একটি ব্যাকটেরিয়া বা ইস্টের কোষে স্থাপন করে ল্যাবে কৃত্রিমভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে।

গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক এলিয়ানে কান্দিয়ানি আরান্তেস জানান, ‘আমরা বায়োপ্রস্পেক্টিংয়ের মাধ্যমে বিচ্ছুর বিষে এমন একটি অণু চিহ্নিত করেছি, যা স্তন ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সক্ষম। এখন আমরা Pichia pastoris নামক ইস্টের মাধ্যমে এটিকে আরও বড় আকারে উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছি।’

পরীক্ষাগারে দেখা গেছে, BamazScplp1 নামের এই পেপটাইড ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে নেক্রোসিস নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে—যেটি অন্যান্য বিষজাত অণুর মতোই কার্যকর। গবেষকদের মতে, এই পদ্ধতি ভবিষ্যতের স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

স্তন ক্যান্সার: বৈশ্বিক ভয়াবহতা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, স্তন ক্যান্সার বিশ্বজুড়ে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার। Nature Medicine-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, প্রতি ২০ জন নারীর মধ্যে একজন জীবদ্দশায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ২৩ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যান প্রায় ৬.৭ লাখ নারী। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান হার বজায় থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩২ লাখে, আর মৃত্যু হতে পারে ১১ লাখেরও বেশি।

ব্রাজিলিয়ান বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা ইতিমধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। বিষের মতো একঘরে ও ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধে রূপান্তরের দৃষ্টান্ত এটি। তবে গবেষকরা সতর্ক করেছেন, মানবদেহে প্রয়োগের আগে এখনো বহু ধাপ পেরোতে হবে—বিশেষ করে পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও নিরাপত্তা যাচাই না হলে এটি ওষুধ হিসেবে বাজারে আসবে না।

তবুও, চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×