ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেভাবে চুলের যত্ন নিবেন!

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ৭ জানুয়ারি ২০২৫

ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেভাবে চুলের যত্ন নিবেন!

দশটি খাবার আছে যেইসব খাবার ঘরে খেলে চুলের যত্ন নেয়া হবে। নিয়ম করে এইসব খাবার খেলে চুল ঘন-কালো ও মজবুত হবে। 

১. বাদাম

বিশেষ করে আখরোট, কাজুবাদাম, কাঠবাদামে প্রচুর বায়োটিন থাকে। এটি চুলের গঠন মজবুত করে, চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আখরোট এবং বাদামজাতীয় খাবারে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায় এবং চুল ঘন ও চকচকে রাখতে সাহায্য করে।

বিশেষত কাঠবাদামে ভিটামিন ই-এর পরিমাণ বেশি থাকে। ভিটামিন ই চুলের স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি চুলকে প্রাকৃতিকভাবে কালো এবং উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। সেই সাথে বাদামে প্রচুর জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম থাকে, যা চুলের শিকড় শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া রোধ করে। চুলের কাঠামো উন্নত করার জন্য প্রোটিন এবং আয়রন গুরুত্বপূর্ণ। বাদামে এই উপাদানগুলো থাকে, যা চুল ঘন এবং মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

২. হলুদ ও কমলা রঙের সবজি 

হলুদ ও কমলা রঙের সবজি, ফলমূল, চুল ঘন, কালো ও মজবুত করতে সাহায্য করতে পারে। এই ধরনের খাবারে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা চুলের গুণগত মান উন্নত করে। এগুলো চুলের গোড়া মজবুত করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

সবজি: গাজর, মিষ্টি কুমড়া ,হলুদ মরিচ ,মিষ্টি আলু

ফলমূল:,পাকা পেঁপে, কমলা, আম।

৩. তৈলাক্ত মাছ 

তৈলাক্ত মাছ  চুল মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি, প্রোটিন এবং বায়োটিন থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং গোড়াকে শক্তিশালী করে। এছাড়া এটি মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন উন্নত করে, যা চুলের শিকড়কে পুষ্টি যোগায়।

তৈলাক্ত মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা চুলের শুষ্কতা দূর করে এবং চুলকে উজ্জ্বল ও মজবুত করে। 

উদাহরণ: ইলিশ, স্যামন, সার্ডিন, ম্যাকারেল, টুনা

৪. ডিম 

ডিম চুল মজবুত করতে অত্যন্ত উপকারী। ডিমে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন, বায়োটিন, ভিটামিন বি১২ এবং বিভিন্ন খনিজ থাকে, যা চুলের গঠন মজবুত করার পাশাপাশি এর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

ডিমের প্রোটিন থাকে যা চুলের মূল উপাদান কেরাটিন পুনর্গঠনে সাহায্য করে। সেই সাথে বায়োটিন থাকে যা চুলের বৃদ্ধি এবং ঘনত্ব বাড়ায়। আয়রন ও জিঙ্ক থাকে যা চুলের শিকড় পুষ্ট করে এবং স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।

৫. পালং শাক 

পালং শাক চুল মজবুত করতে অত্যন্ত কার্যকর। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেট, যা চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং চুল মজবুত করতে সহায়তা করে। পালং শাকে আয়রন থাকে যা চুলের ফলিকলে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে এবং চুলের বৃদ্ধি এবং শক্তি বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুলের ক্ষতি রোধ করে এবং স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

৬. ডাল 

ডাল চুল মজবুত করতে অত্যন্ত সহায়ক। ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, বায়োটিন, ফোলেট এবং অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ থাকে, যা চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কোন ডালগুলো বেশি উপকারী: মসুর ডাল, মুগ ডাল, মটর ডাল।

৭. বিভিন্ন ধরনের বীজ 

বিভিন্ন ধরনের বীজ  চুল মজবুত করতে অসাধারণভাবে সাহায্য করে। এগুলোতে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং প্রোটিন থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে।

চুলের জন্য উপকারী বিভিন্ন বীজ: ফ্ল্যাক্স সিড (তিসি বীজ), চিয়া সিড, সানফ্লাওয়ার সিড ,পাম্পকিন সিড (কুমড়ার বীজ),সিসেম সিড (তিলের বীজ), ফেনুগ্রিক সিড (মেথি বীজ)। 

৮. ছোলা 

ছোলা চুল মজবুত করতে খুবই উপকারী। ছোলায় প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, বায়োটিন, ফোলেট এবং ভিটামিন বি৬-এর মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা চুলের গঠন মজবুত করতে এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।

ছোলায় প্রোটিন থাকে যা চুলের প্রধান উপাদান কেরাটিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা চুলকে শক্তিশালী করে।

ছোলার ব্যবহার পদ্ধতি খাদ্য হিসেবে:

ছোলা সেদ্ধ বা ভেজানো অবস্থায় সালাদ, কারি, বা স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন। এটি চুলের জন্য প্রোটিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

৯. টক দই

টক দই চুল মজবুত করতে অত্যন্ত উপকারী। টক দইয়ে থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি৬, এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে, চুল পড়া রোধ করে, এবং চুলকে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখে। টক দইয়ে ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে যা স্ক্যাল্পের মৃত কোষ পরিষ্কার করে এবং চুলের শিকড়কে পুষ্টি দেয়।

১০. টক ফল

টক ফল চুল মজবুত করতে সহায়ক হতে পারে। টক ফলগুলোতে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে, যা চুলের গুণগত মান উন্নত করতে সাহায্য করে। টক ফলের প্রাকৃতিক অ্যাসিড এবং পুষ্টি চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

টক ফলে ভিটামিন সি থাকে যা এটি চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে এবং কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা চুলের স্বাস্থ্য এবং গঠন উন্নত করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুলের ক্ষতি রোধ করে এবং স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। অ্যাসিড থাকে যা চুলের স্ক্যাল্পে প্রাকৃতিক শাঁস এবং তেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, ফলে চুল উজ্জ্বল এবং মসৃণ হয়।

কিছু টক ফল যা চুলের জন্য উপকারী: লেবু, পাকা আম, কমলা, পেঁপে।
 

রিফাত

×