
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই শেখা ও ব্যক্তিগত উন্নতির পথ থেকে সরে আসেন। কেন এমন হয়? কারণ বিভিন্ন। কেউ মনে করেন, তারা যথেষ্ট জেনে ফেলেছেন, আবার কেউ আরামদায়ক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো সেই ৭টি আচরণ, যা সাধারণত তাদের মধ্যে দেখা যায় যারা শেখা ও ব্যক্তিগত উন্নতি বন্ধ করে দিয়েছেন।
১) পরিবর্তনের প্রতি প্রতিরোধ
যারা শেখা বন্ধ করে দিয়েছেন, তাদের জীবনে পরিবর্তনের প্রতি এক ধরনের অনীহা দেখা যায়। তারা পরিচিত এবং আরামদায়ক জগতে থাকতে পছন্দ করেন এবং নতুন কিছু গ্রহণ করতে ভয় পান।
২) প্রশ্ন করা বন্ধ করে দেওয়া
জ্ঞানী মানুষরা সবসময়ই প্রশ্ন করেন। কিন্তু যেসব মানুষ শেখা বন্ধ করে দেন, তারা প্রশ্ন করা ছেড়ে দেন।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যিনি ছোটবেলায় খুব কৌতূহলী ছিলেন, তিনি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবতে শুরু করেন যে তিনি যথেষ্ট জেনে ফেলেছেন। এই কৌতূহল হারিয়ে যাওয়ার ফলে শেখার আগ্রহও ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।
৩) চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে চলা
যারা শেখা এবং উন্নতি বন্ধ করে দেন, তারা সাধারণত চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে চলেন।
চ্যালেঞ্জ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তবে যারা এগুলো এড়িয়ে চলেন, তারা নতুন দক্ষতা শেখা বা সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ হারান। এর ফলে তাদের ব্যক্তিগত উন্নতির পথ থমকে যায়।
৪) কৌতূহলের অভাব
কৌতূহল হলো শেখার প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু যারা শেখা বন্ধ করে দেন, তাদের কৌতূহল ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায়।
তারা নতুন কিছু জানার আগ্রহ হারান এবং যা জানেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন। এই কৌতূহলের অভাব তাদের জীবনকে একঘেয়ে করে তোলে এবং নতুন অভিজ্ঞতার দ্বার রুদ্ধ করে দেয়।
৫) লক্ষ্য নির্ধারণ বন্ধ করে দেওয়া
লক্ষ্য নির্ধারণ জীবনের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে যারা শেখা এবং উন্নতি বন্ধ করেন, তারা লক্ষ্য নির্ধারণ করতেও আগ্রহী হন না।
নতুন কোনো লক্ষ্য না থাকলে, শেখার তাগিদও থাকে না। ফলে ব্যক্তি জীবনে স্থবিরতা চলে আসে।
৬) নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা
যারা শেখা বন্ধ করে দেন, তারা নিজেদের এক প্রকার বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন।
এটি শারীরিকভাবে হতে পারে, যেমন—সমাজ থেকে দূরে থাকা, অথবা মানসিকভাবে, যেমন—বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনায় অংশ না নেওয়া।
বিচ্ছিন্নতার ফলে তারা অন্যদের কাছ থেকে শেখার এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়ার সুযোগ হারান।
৭) ব্যর্থতার ভয়
সবচেয়ে বড় বাধা হলো ব্যর্থতার ভয়। ব্যর্থতা হলো শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা দেয় এবং আরও ভালোভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেখা এবং ব্যক্তিগত উন্নতি চালিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ আমাদের নিজের সিদ্ধান্ত।
মোটিভেশনাল লেখক ব্রায়ান হারবার্ট একবার বলেছিলেন, “শেখার ক্ষমতা একটি উপহার; শেখার দক্ষতা একটি শিল্প; শেখার ইচ্ছা একটি পছন্দ।”
তাই নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ, লক্ষ্য নির্ধারণ, এবং ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের শেখার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারি।
জাফরান