ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য কত হওয়া উচিত?

প্রকাশিত: ২১:১৮, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য কত হওয়া উচিত?

ছবি: সংগৃহীত।

শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের ভালোবাসা ও যত্ন অপরিসীম। কিন্তু, যখন বিষয় আসে তাদের পরবর্তী সন্তান আনার, তখন একটি সাধারণ প্রশ্ন সামনে আসে—দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য কত হওয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে পারিবারিক পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, শিশুদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক উন্নতির জন্য প্রভাব ফেলতে পারে। চলুন, এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক জানার চেষ্টা করি।

দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য: কি বলছে গবেষণা?

পারিবারিক পরিকল্পনায় বয়সের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা একটি পুরনো বিষয়। অনেকেই ভাবেন যে, দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য হলে সুবিধা হয়—একজন বড় হবে, আরেকজন ছোট, তাদের মধ্যে একে অপরের জন্য সময় ও মনোযোগ পাওয়া সহজ হয়। আবার, অন্যদের মতে, সন্তানদের মধ্যে খুব কম বয়সের পার্থক্য হলে ভাইবোনের সম্পর্ক বেশি দৃঢ় হয় এবং তারা একে অপরের সঙ্গে খেলাধুলা করতে এবং বেড়ে উঠতে পারে। তবে, কোন বয়সের পার্থক্য সবচেয়ে উপকারী, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বয়সের পার্থক্য ও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক

গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সন্তানের মধ্যে বয়সের পার্থক্য ২-৪ বছর হওয়ার ফলে মা-বাবার কাছে সন্তানদের যত্ন নেওয়া সহজ হয়। প্রথম সন্তানের যত্ন নেওয়ার পর, কিছুটা সময় পাওয়া যায় যাতে পরবর্তী সন্তানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়। পাশাপাশি, যদি বয়সের পার্থক্য বেশি হয় (যেমন ৫ বছর বা তার বেশি), তবে বড় সন্তানটি কিছুটা স্বাধীন হয়ে যায়, যা ছোট সন্তানের দেখভাল করতে সহায়ক হতে পারে।

কোন বয়সের পার্থক্য সবচেয়ে ভালো?

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সন্তানের বয়সের পার্থক্য নির্ভর করে তাদের মানসিক ও শারীরিক চাহিদার ওপর। সাধারণত, ২-৩ বছর বয়সের মধ্যে পার্থক্য হলে ভাইবোনরা একে অপরের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারে এবং শেয়ারিংয়ের মতো সামাজিক দক্ষতাও অর্জন করতে পারে। তবে, যদি বয়সের পার্থক্য ৪-৫ বছর বা তার বেশি হয়, তখন বড় সন্তানটি নিজস্ব পরিচিতি ও স্বাধীনতা পায়, যা পরিবারে কিছুটা ভারসাম্য সৃষ্টি করতে সহায়ক হতে পারে।

স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিকোণ

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু দিকও গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রথম সন্তান জন্মের পর মা শারীরিকভাবে পরবর্তী সন্তানের জন্য প্রস্তুত না হন, তবে তাদের মধ্যে অনেক সময় শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য বেশি হলে, মা-ও শারীরিকভাবে পরবর্তী সন্তানের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।

পারিবারিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক দিক

অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পারিবারিক পরিস্থিতিও একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যদি অভিভাবকদের একাধিক সন্তান পালনের জন্য যথেষ্ট সময় এবং অর্থ না থাকে, তবে একে অপরের মধ্যে ৪-৫ বছরের বয়সের পার্থক্য থাকতে পারে যাতে তারা প্রথম সন্তানকে সম্যক যত্ন দিতে পারে এবং পরবর্তী সন্তান আনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

যতই গবেষণায় তথ্য পাওয়া যাক না কেন, আমাদের সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক পরিবারে বয়সের পার্থক্য ছোট রাখার পক্ষপাতী, যাতে সন্তানরা একে অপরের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারে এবং একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে পারে। আবার, অন্যদিকে, বৃহৎ বয়সের পার্থক্য থাকলে, বড় সন্তান ছোট ভাইবোনের প্রতি দায়িত্ববোধ প্রকাশ করতে পারে, যা পরিবারে আরও দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলে।

যদিও কোনও নির্দিষ্ট বয়সের পার্থক্য নেই যা সবার জন্য উপযুক্ত হবে, তবে অভিভাবকরা তাদের পরিস্থিতি, পরিকল্পনা এবং সন্তানদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সন্তানের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এবং পারিবারিক সম্পর্ককে সঠিকভাবে মেনে চলা।

নুসরাত

×