ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

সুখী দাম্পত্য, তারপরও কেন মানুষ প্রেমে পড়ে?

প্রকাশিত: ১২:৪৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সুখী দাম্পত্য, তারপরও কেন মানুষ প্রেমে পড়ে?

সব আছে কিন্তু কিসের যেন অভাব। প্রতীকী ছবি।

সম্পর্কের রংবদলের সঠিক কারণ সব সময় ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে মনের যে অংশটা অফুরান চাহিদা হাজির করে আমাদের সামনে, সেই অংশের কারসাজিতেও এমনটা হতে পারে। সব আছে কিন্তু কিসের যেন অভাব- এমন একটা অনুভূতি থেকে কেউ নিজের সঙ্গী ছাড়া অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে পারেন। 

বিশ্লেষকরা মেনে করেন, সম্পর্কের রংবদলের বিষয়ে কারো কারো ক্ষেত্রে অবশ্য পারিবারিক জীবনে বঞ্চনাও থাকতে পারে, যা হয়তো সামাজিক পরিসরে অন্যরা জানেন না। আর তাই এমনটি নিজের অজানতেও হয়ে যেতে পারে।

লাভ হরমোন: সম্পর্কে তৃতীয় পক্ষের আগমনের অন্যতম প্রধান কারণ নতুনত্বের খোঁজ ও ভিন্নতর আকর্ষণের অনুভূতি। আবার অনেকেই নতুন প্রেমে পড়ার অভিজ্ঞতা, রোমাঞ্চের হাতছানি আগ্রাহ্য করতে পারেন না। সম্পর্ক যখন পুরোনো হতে থাকে, তখন সেই সম্পর্ক শরীরের সুখানুভূতি বা হরমোনের নিঃসরণকে আগের মতো প্রভাবিত করতে পারে না। 

অক্সিটোসিনের অরেক নাম ‘লাভ হরমোন’। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে তৈরি হয়ে পিটুইটারি গ্রন্থির পেছনের অংশে জমা থাকে এবং প্রয়োজনের সময় সেখান থেকে নিঃসৃত হয়। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হলে মস্তিষ্কে ডোপামিন আর সেরোটোনিনের পাশাপাশি অক্সিটোসিনের নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে প্রেমানুভূতি তৈরি হয়। নারীদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই অক্সিটোসিনের পরিমাণ বেশি থাকে। আর ঠিক এ কারণেই পুরুষেরাই বেশি প্রেমে পড়েন!  

মনের মেঘের রংবদল: আমরা সব সময় সচেতনভাবে ভাবতে পারি, এমন কিন্তু নয়। এমনটাও হতে পারে, যে যিনি একটা সুখী সম্পর্কে থাকা সত্ত্বেও অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন। তিনি নিজেও বলতে পারছেন না ঠিক কী কারণে, কীভাবে তৃতীয় কেউ তার জীবনে চলে এলো। স্রেফ একটা মানুষের প্রতি ভালোলাগা থেকেই প্রেম হয়ে যেতে পারে। বয়সের সঙ্গে প্রত্যেকের শরীরেই পরিবর্তন আসে। আর মনের চাহিদাও বদলে যায়।

শরীরিক চাহিদার পার্থক্য: ম্যারিজ ডটকমে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, পুরুষদের অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো- মাতৃত্ব, বয়সজনিত বা অন্য কোনো কারণে নারী সঙ্গীর শারীরিক পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে না পারা। দুজনের শারীরিক চাহিদার পার্থক্যও অনেক সময় তৃতীয় পক্ষকে সম্পর্কে আমন্ত্রণ জানায়।

অতীতের ছাপ: বিয়ের আগে গভীর প্রেমের সম্পর্কেও জড়ান কেউ কেউ। সব সম্পর্ক যে বিয়ের পরিণতিতে পৌঁছাতে পারে, তেমনটা তো নয়। পরিণতি না পাওয়া সেই সম্পর্ক ভুলে গিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে সাময়িকভাবে সুখীও হন কেউ। তবে জীবনের কোনো এক মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি হয়তো পুরোনো সম্পর্কের নস্টালজিয়ায় ভুগতে পারেন। যদি তার প্রাক্তনের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে- এমন কারো সঙ্গে পরিচয় হয় তাহলেও কিন্তু তিনি নতুনভাবে এই মানুষটির প্রেমে পড়তে পারেন। 

দাম্পত্য সম্পর্ককে ‘ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে নেওয়া: সম্পর্কের গতিশীলতার সঙ্গে তাল মেলানোটা জরুরি। সময়ের সঙ্গে সংসার-সন্তানের দায়িত্ব বাড়লেও জুটি হিসেবে দম্পতির প্রাণবন্ত থাকাটা জরুরি। কর্মব্যস্ত দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে যদি একজন রোজই ঘুমিয়ে পড়েন চটজলদি, তাতে তো অপরজনের অভিমান হতেই পারে। দুটি কথা কিংবা একটু আলতো স্পর্শ থেকে যদি নিজেকে বঞ্চিত অনুভব করেন কেউ, তাহলে জমতেই পারে অভিমানের মেঘ। যেকোনো একজন দাম্পত্য সম্পর্ককে ‘ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে নিলে অপরজন তৃতীয় পক্ষের শরণাপণ্ন হতে পারেন। এমন অবস্থায় কেবল একটু কথা বলে মন হালকা করার জন্যও যদি তিনি তৃতীয় কারো সঙ্গে মিশতে শুরু করেন, তাহলেও কিন্তু মনের অজান্তেই বোনা হয়ে যেতে পারে প্রেমের বীজ। 

এম হাসান

×