ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের বন্ধু  সানজিদা আয়েশা

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০১:৩৪, ১ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রতিবন্ধীদের বন্ধু  সানজিদা আয়েশা

সানজিদা আয়েশা

সানজিদা আয়েশা বরিশালের সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পেশাগত জীবনকে এগিয়ে নিচ্ছেন। কাজের জায়গা বরিশালের প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে। পারিবারিক এক শুদ্ধ নির্মল পরিবেশে গড়ে ওঠা সানজিদা নিজেকে তৈরি করেন একজন যথার্থ মানুষ হিসেবে। তবে নারী হিসেবে নমনীয়তা আর কমনীয়তায় ভরপুর সানজিদা যেমন মাতৃত্বের শৌর্যে মহিমান্বিত পাশাপাশি অসহায় তৃণমূল নারীদের প্রতিও রয়েছে সচেতন দায়বদ্ধতা। পিতা অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম। মায়ের নাম হোসেন আরা বেগম।

একজন সুগৃহিণী মায়ের হাতে রান্না খেতে খেতে বড় হওয়া সানজিদা আজও তেমন স্বাদ ভেতরের বোধে জিইয়ে রেখেছেন। নিজে যখন রাঁধতে যান তেমন রান্নার আমেজ তাকেও পেয়ে বসে। যা স্মরণ চেতনায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। পিতা পটুয়াখালী সরকারি কলেজ ও ফরিদপুর সরকারি কলেজের সর্বোচ্চ পদ অধ্যক্ষের স্থানে অভিষিক্ত হওয়াও কন্যার জন্য এক অসম গৌরবের বিষয়। শিক্ষক পিতার সাহচর্যে নিজেকে তৈরি করতে গিয়ে জীবনের লক্ষ্যেও অবিচল থাকতে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছে। শিক্ষার্থী হিসেবে ২০০৩ সালে পটুয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন।

পরবর্তীতে একই জেলার সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে সফল হয়ে নেমে পড়তে হয় ভর্তির জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। ভর্তি তো নয় বরং বলা যায় ভর্তিযুদ্ধ। তেমন অসম সাহসিক লড়াইয়ে যে সফলতা জীবনকে উদ্দীপ্ত করতে সর্বাধিক ভূমিকা রাখে তা হলো প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে স্বীকৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অবিস্মরণীয় সুযোগ হাতের নাগালে চলে আসা। আনন্দে উদ্বেলিত সানজিদা তেমন সুখ স্মৃতিকে লালন করে ভর্তি হলেন লোক প্রশাসন বিভাগে। সম্মান নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করাও জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে জোর কদমে এগিয়ে যাওয়ার অনন্য অনুপ্রেরণা। দুই বোন-এক ভাইয়ের সংসারে পিতা-মাতা পুত্র-কন্যার সামান্যতম বিভেদও তৈরি করেননি।

সমতা ভিত্তিক পরিবারের পরিচ্ছন্ন আবহ বরাবরই মেয়ে নয় বরং মানুষ হিসেবে ভাবতে উৎসাহিত করেছে। তবে নারীর সহজাত প্রবৃত্তিও ভেতর থেকে উৎসাহিত হওয়া নারী শক্তির অনন্য সাবলীলতা। তবে বলতে দ্বিধা করলেন না কন্যা হিসেবে বাবা-মায়ের ¯েœহ-আতিশয্য এবং সুযোগ-সুবিধা যেন বেশিই পেয়ে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালেই অন্যের ঘরনি হয়ে চলে যেতে হয় শ্বশুরবাড়িতে। তখনো শিক্ষার্থী জীবনের পর্ব চলমান। দ্বিতীয় বর্ষের সম্মানের শিক্ষার্থী সে সময়। পরবর্তীতে নিজের সংসার-পরিবার সামলিয়ে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করা ছাড়াও বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসা যেন নিত্য জীবনের এক লড়াকু পথপরিক্রমা।

তবে স্বামীর সহযোগিতা ছাড়া শিক্ষা জীবনকে অবারিত করা অসম্ভব হতো বলে নির্দ্বিধায় স্বীকার করলেন। এখনো বরিশালে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে সবার মধ্যে থাকাটাকেই প্রাধান্য দিতে পেছনের দিকে তাকাচ্ছেন না পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব সমাপ্ত করার মধ্য দিয়ে পড়াশোনা পর্বের ইতি ঘটালেন না, আইন বিষয়ে নিজেকে তৈরি করতেও পরম উৎসাহে এগিয়ে চললেন। ইতোমধ্যে দুই পুত্র সন্তানের জননী হয়ে মাতৃত্বের আকাক্সক্ষা পূর্ণ করাও এক প্রকার শান্তি, স্বস্তি আর গৌরবের ব্যাপার। বসতে হলো ৩৭তম বিসিএসের প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায়। দীর্ঘ এক পথপরিক্রমা এই বিসিএসের মতো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে অপেক্ষমাণ থাকা।

উত্তীর্ণ সবাই যথার্থ ক্যাডারে আসতে পারেন না। সানজিদাও অনেকের মতো নন-ক্যাডারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করা নতুন এক জগতে সমর্পিত হওয়া। আরও উচ্চতর গবেষণায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে নজর দিলেন এমফিল ডিগ্রির প্রতি। বিষয় নির্বাচনেও অনন্য চেতনায় এগিয়ে গেলেন। পারিবারিক শিক্ষণের সুযোগ সম্ভাবনা। অর্থাৎ পরিবারই সর্ব প্রথম সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়ামক শক্তি। তেমন শক্তিময়, স্বাচ্ছন্দ্য পরিবেশে যথার্থ শিক্ষণীয় অনেক কিছু নির্ধারণ করে থাকে। কর্মজীবনে এখন বরিশালের প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সমাজসেবা কর্মকর্তা।

কাছ থেকে অসহায় মানুষকে সেবা করতে গিয়ে তাদের প্রতি যে সচেতন দায়বদ্ধতায় নিজেকে উৎসর্গ করেন সেটাও এক অনন্য জীবনবোধ। মানুষ মানুষের জন্য এমন অসাধারণ বার্তা লালন করে যাচ্ছেন সব সময়। আর নারী হিসেবে নিজস্ব শ্রেণি বলয়ের প্রতিও আছে সজাগ, সতর্ক নজর। বিশেষ করে বয়োসন্ধিকালে কন্যাদের যে শরীর-মনের দোলাচল তাও এই সেবামূলক কাজের নিবেদিত কর্মকর্তাকে সব সময় ভাবিত করে যাচ্ছে। সেখানে প্রতিবন্ধী কিশোরীদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে তাদের নিয়মিত ঋতুস্রাবের ব্যাপারে অসচেতনতাও সানজিদাকে উদ্বিগ্ন করে। স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের অপর্যাপ্ততাকেও সমস্যার কারণ হিসেবে নিয়ে আসেন। সেখানে পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজÑ সবারই সজাগ দৃষ্টি আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন। 

×