ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

চিকিৎসক ফরিদা পেশার ঝুঁকি ও সন্তুষ্টি

বাবু ইসলাম

প্রকাশিত: ০১:৩১, ১ ডিসেম্বর ২০২৩

চিকিৎসক ফরিদা পেশার ঝুঁকি ও সন্তুষ্টি

চিকিৎসক ফরিদা

তিনি একজন চিকিৎসক, রত্নগর্ভা মা। দুই পুত্র সন্তানের জননী। একজন ডাক্তার, একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। একজন বিদেশে, অপরজন দেশে কর্মরত রয়েছেন। সরকারি চাকরিতে চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত থেকে দুই সন্তানকে যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কৃতিত্ব যে মায়ের তিনি অবশ্যই সফল মা। এই সফল মায়ের প্রতিচ্ছবি ডা. ফরিদা খাতুন। চাকরি জীবনের শুরু থেকে  শেষ পর্যন্ত ৩৫ বছরের ২২ বছরই প্রসূতি সেবায় সময় ব্যয় করেছেন। চাকরি করেছেন শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে (হাসপাতাল)।

অবসরে এসে এখনো প্রসূতি মাসহ নারীর শারীরিক নানা জটিলতার চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। অনেক সময় সংকটাপন্ন প্রসূতি মায়ের ও সন্তানের জীবন রক্ষায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। কখনো বাহবা পেয়েছেন, নবজাতকের পরিবার থেকে উপহারও পেয়েছেন। আবার অকস্মাৎ নবজাতক কিংবা প্রসূতি পৃথিরীর মায়া ছেড়ে চলে গেলে ভর্ৎসনার শিকার হয়েছেন।  চিকিৎসা সেবায় প্রাণপণ চেষ্টা করেও প্রসূতি বা নবজাতকে বাঁচাতে না পারার ব্যর্থতার দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে মনের দুঃখে, নিদারুণ কষ্টে নীরবে কেঁদেছেন।    
বর্তমান সময়ে গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবকালীন বেশিরভাগ সময়েই পেট কেটে (সিজারিয়ান)  বাচ্চা বের করে আনা হচ্ছে কারণ কি প্রসঙ্গে  ডা. ফরিদা খাতুন  বললেন- প্রসূতির পেটে বাচ্চা কখনো আড়াআড়ি বা উল্টো অবস্থানে থাকলে তা সিজার করে বের করা গর্ভধারিণীর এবং সন্তানের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা। তাছাড়াও প্রসূতির প্রসবকালীল কষ্ট লাঘবে পরিবার বা অভিভাবকের চাহিদা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সিজার করা হয়।

আগের তুলনায় বর্তমান সময়ে সিজারিয়ান বাচ্চা বেশি কেন প্রশ্নে  গাইনি ও অব্স বিভাগের ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডা. ফরিদা জানান আগের প্রসূতি মায়েরা তুলনামূলক শারীরিক পরিশ্রম বেশি করতেন বলেই স্বাভাবিক প্রসব  বেশি  হতো। এখন মায়েরা পুষ্টিকর খাবার পরিমাণের চেয়ে বেশি বেশি খেয়ে অলস সময় কাটান, তাই জরায়ুর মুখ প্রসারিত হয় না। এ জন্য স্বাভাবিক প্রসব বাধাগ্রস্ত হয়। 
বয়োসন্ধিকালীন কিশোরীদের সমস্যা সম্পর্কে তিনি জানান- এ সময়টা একজন কিশোর কিশোরীর শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। অনেকেই হতবাক হয়ে যায় বিশেষ করে কিশোরীরা বিমর্ষ হয়ে পড়ে। হঠাৎ এই পরিবর্তন তাদের জন্য বিব্রতকরও বটে। কিন্তু পরিবার থেকে এ বিষয়টি শেখার সুযোগ কম। লজ্জায় কেউ সহজে বলতে চায় না। মা-চাচি, খালা ফুফুরা বেশিরভাগ সময়েই সম্মিলিত পরিবারে বসবাস করেন না, তাদের বিচ্ছিন্নভাবে ব্যস্ততায় সময় কাটে । এ জন্য বেশিরভাগ  মেয়েরা পরিবার থেকে শেখার সুযোগ কম পায়। পাঠ্য পুস্তকে সরকার বইয়ে বিষয়গুলো সন্নিবেশিত করেছেন জেনে যথার্থ  কাজ বলে মনে করেন এই অভিজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি  শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

তার অভিজ্ঞতা- এখনো গ্রামের বেশিরভাগ কিশোরীসহ অনেক নারীই পিরিয়ডের সময় পুরনো কাপড় ব্যবহার করেন। বাজারে স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন পাওয়া গেলেই তা কেনার মানসিকতা গড়ে উঠেনি।  স্বাস্থ্যসম্মত ন্যাপকিন ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি জানান- পুরাতন কাপড় ব্যবহারের ফলে অনেক সময় নারীর গুরুত্বপুর্ণ অঙ্গে নানা রোগ দেখা দেয়, এমনকি যৌন আকাক্সক্ষাও  কমে যায়। মাতৃত্বহানির যতগুলো কারণ আছে তার মধ্যে এটি একটি কারণ।

নারীর গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন একজন চিকিৎসক।  গর্ভধারণের পর থেকেই বর্তমান সমযে একজন প্রসূতির নানা জটিলতা শুরু হয়। বমি বমি ভাবসহ খাবারের অরুচি দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো প্রসূতির গর্ভের সন্তান বড় হতে থাকে, জটিলতাও বাড়তে থাকে। জটিলতা উপসমের জন্য চিকিৎসকের  শরণাপন্ন হন।  গাইনি ও অব্স বিষয়ে দেশ-বিদেশে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই চিকিৎসক ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনায় বলেন- প্রসূতির সন্তান প্রসবের পর নবজাতক যদি এক মিনিটের মধ্যে কেঁদে না উঠে, সেখানেই চিকিৎসকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে নবজাতকের মুখে নিজরে মুখ রেখে ফুঁ দিয়ে  কাঁদিয়েছেন।

এটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে না পারলে নবজাতকের শারীরিক নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। হয়েছেও অনেক ক্ষেত্রে। ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে নবজাতক, মা এবং অভিভাবককে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ২০তম ব্যাচের এই চিকিৎসকের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে উনি দ্বিতীয়। বর্তমানে বাস করেন সিরাজগঞ্জ শহরে। তার স্বামী এম আকরামুজ্জামানও একজন চিকিৎসক। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক। স্বামী-স্ত্রী দুইজনই সরকারি চাকরি এবং বাইরে প্র্যাকটিস করার পরও দুই সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলেছেন। বড় সন্তান চিকিৎসক, চাকরি নিয়ে ইংল্যান্ডে সস্ত্রীক বসবাস করেন। দ্বিতীয় সন্তান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং সস্ত্রীক বসবাস করেন। একই সঙ্গে ছোট বোনের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া মেয়েকে লালনপালন করে বিয়ে দিয়েছেন। আত্মীয়-পরিজনের প্রতিও দায়িত্ব পালনে কার্পণ্য করেননি। 

×