ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

যে ১০ বদভ্যাস আপনাকে বিরক্তিকর প্রকাশ করবে

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ২ অক্টোবর ২০২৩

যে ১০ বদভ্যাস আপনাকে বিরক্তিকর প্রকাশ করবে

আড্ডা

সহপাঠী কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে চলাফেরা করতে গিয়ে আলাপে আলাপে উঠে আসে নানা কথা। ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন রকম মানুষের সঙ্গে আড্ডায় বা আলাপ করতে বসে অনেক সময়ই অভ্যাসবশত আমরা কিছু ভুল করে বসি, যা আদতে শোভন নয়। 

জেনে রাখুন এমন ১০ বদভ্যাস ও সমাধানের পরামর্শ--

 ১. অন্যকে বাধা দেওয়া
কোথাও আড্ডা দিচ্ছেন, পাশের মানুষটি অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছেন। হুট করে আপনার মাথায় কী ভাবনা জেগে বসল, আপনিও তার কথার মধ্যে নিজের কথাটি বলে ফেললেন। আপাতদৃষ্টে এটা স্বাভাবিক লাগলেও আদতে তা বদভ্যাস। অন্যের কথার মধ্যে হুট করে নিজে কিছু বলে ফেলা, তা যত প্রাসঙ্গিকই হোক না কেন, মোটেও ভালো দেখায় না। অন্যকে পুরোপুরি আলাপ শেষ না করতে দেওয়াটা তাঁকে অসম্মান করার সমার্থক। তাই খুব বেশি জরুরি না হলে অন্যের আলাপের মধ্যে নিজের কথা জুড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

২. শুধু নিজের কথা বলা
বেশি বেশি নিজের কথা বলায় একধরনের অহংকার লুকিয়ে থাকে। তা ছাড়া আপনি যে অন্যের আলাপে মনোযোগী নন, সেটিও এই বদভ্যাসের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। তবে এটা ঠিক যে সবাই চান নিজেকে একটু প্রকাশ করতে। কিন্তু অন্যকে সুযোগ না দিয়ে বেশি বেশি নিজের কথা বলা ভালো দেখায় না। তা ছাড়া আড্ডায় বা আলাপে বেশি বেশি নিজের ‘ঢোল পেটানো’ অন্যদের জন্য খুবই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তাই সম্ভব হলে এই বদভ্যাস আজই ত্যাগ করুন।

৩. কথা বলতে বলতে মুঠোফোন স্ক্রল করা
পাশে বসে কেউ কথা বলছেন আর আপনি মনোযোগ দিয়ে তা শুনছেন। হঠাৎ আপনার মুঠোফোন টুং করে বেজে উঠল। হয়তো কেউ কোনো খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন। আপনি মুঠোফোন হাতে নিয়ে বার্তাটি পড়ে অভ্যাসবশত স্ক্রলিং করতে লাগলেন। এ রকম ঘটনা আপনার–আমার সঙ্গে প্রায়ই ঘটে। আলাপের মাঝখানে মুঠোফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়াও একটি বদভ্যাস। মুঠোফোন মূলত দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। তাই ঠিক আপনার পাশে বসে যে মানুষটি কথা বলছেন, তাঁর সামনে মুঠোফোন ব্যবহার না করে তাঁকে মনোযোগী সময় দিন।

৪. সব সময় নিজেকে সঠিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা
স্বাভাবিক আড্ডা বা আলাপ হুট করেই বিতর্কে পরিণত হতে পারে। তর্কে জেতার জন্য নিজের বলা সব কথাকেই সঠিক বলে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তবে এটাও বর্জনীয় বদভ্যাস। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে কে সঠিক কে ভুল, তা নিয়ে পড়ে না থেকে অন্যের মতামতের প্রতি সহনশীল হওয়া জরুরি।

৫. অন্যের কথা শেষ না করতে দিয়ে মন্তব্য আরোপ করা
বেশির ভাগ মানুষই অন্যের কথা পুরোপুরি শুনতে চান না। অন্যের কথার মাঝখানে নিজের মন্তব্য কখন জুড়বেন, সে অপেক্ষায় থাকেন সব সময়। এটা আরেকটি বদভ্যাস। কেউ আপনার সামনে কোনো কথা বলছেন বা ঘটনা শেয়ার করছেন, ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিয়ে তা শুনুন। তাঁর কথার মাঝেই নিজের মন্তব্য করতে ইচ্ছা হলে পাণ্ডিত্য প্রকাশ না করে চুপ থাকুন, লম্বা একটি শ্বাস নিন আর অপেক্ষা করুন। অন্যের কথা আগে শেষ হোক, তারপর সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে মন্তব্য করুন।

৬. সব আলাপকে ‘গসিপে’ পরিণত করা
যেকোনো আলাপে ‘গসিপ’ জুড়ে দেওয়া মোটেও ভালো কাজ নয়। বর্তমান দুনিয়ায় কোনো তথ্য যাচাই করার মতো পর্যাপ্ত সময় যেহেতু সবার হাতে নেই, তাই কারও সম্পর্কে মনগড়া কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এর ফলে ঈর্ষান্বিত হওয়া, পরনিন্দা চর্চা করা, গুজব রটানোর মতো বর্জনীয় কাজ থেকে সহজে নিজেকেই দূরে রাখা যায়। তাই কিছু বলার না থাকলে চুপ থাকাই শ্রেয়!

৭. অপ্রয়োজনীয় বা অযাচিত মন্তব্য করা
কথা বলার সময় অন্যের মতামতকে যেমন সম্মান করা উচিত, তেমন অন্যের ধর্ম, সংস্কৃতি, চালচলনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকেও আমাদের উচিত শ্রদ্ধা করা। আড্ডার ফাঁকে আপনার অপ্রয়োজনীয় কথায় বা মন্তব্যে যদি কেউ আঘাত পান, তবে অবশ্যই ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আর তাঁকে পরবর্তী সময়ে একই কথা না বলার প্রতিশ্রুতি দিন।

৮. তালে তাল মেলানো
কেউ সম্প্রতি সপরিবার সেন্ট মার্টিন ঘুরে এসেছেন, সেখানকার দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা তিনি আপনাকে শেয়ার করছেন। মাঝপথে আপনিও বছর পাঁচেক আগে আপনার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের কথা বলে ফেললেন। এমনটা আমরা প্রায়ই করি। কারও কথার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা নিজের অভিজ্ঞতাকে বেশি জাহির করে ফেলি। এটাও বদভ্যাস। তাই অন্যের অভিজ্ঞতা আগে ভালো করে শুনুন। সেখানে অযাচিত নিজের অভিজ্ঞতাটা উল্লেখ না করাই ভালো।

৯. বেশি বেশি অনুসন্ধানী ও ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা
কোথাও বসে জম্পেশ আড্ডা দিচ্ছেন। আপনার আড্ডাবাজ বন্ধুটি অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছেন। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তাঁর জীবনের সব সত্য সে আপনার সামনে তুলে ধরতে প্রস্তুত। আড্ডায় সবচেয়ে বকবক করা মানুষটিরও কিছু ব্যক্তিগত বিষয় থাকে, যা একান্তই তাঁর নিজের। সেখানে অন্যের অনধিকার প্রবেশকাম্য নয়। তাই আলাপের মধ্যে অহেতুক অনুসন্ধানী বা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে কাউকে বিব্রত করা থেকে বিরত থাকুন। 

১০. অপ্রয়োজনীয় ঠাট্টা করা
অফিসে কাজের ফাঁকে একটু ফুরসত পেয়েছেন, কজন সহকর্মীর সঙ্গে এক কোণে আড্ডা দিচ্ছেন। নিজেই আড্ডা মাতিয়ে রাখছেন বেশ। আপনার সেন্স অব হিউমারও দারুণ। কিন্তু শ্রোতারা আপনার সেন্স অব হিউমার সম্পর্কে জানেন না। আপনি হুট করে ঠাট্টা করে কোনো কথা বলে ফেললেন কিংবা মজার ছলে কাউকে ব্যঙ্গ করলেন। আপনি হয়তো মজার ছলেই কাজটি করেছেন, কিন্তু অন্যরা সেটাকে মজা হিসেবে না–ও নিতে পারেন। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

 

এস

×