ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

গুছিয়ে কাজ করুন, ফুরফুরে থাকুন

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গুছিয়ে কাজ করুন, ফুরফুরে থাকুন

কাজ গুছানোয় ব্যস্ত ঐশী

আজকাল ব্যস্ততা বেড়েছে সবারই। চাকরিজীবীরা সারাদিন অফিসের পর বাসায় ফিরে আবার ঘরের কাজ করতে গিয়ে আলাদা আর সময় থাকেনা। বিশেষ করে চাকরিজীবী মেয়েরা- সারাদিন অফিস করে, সংসার-সন্তান সামলে নিজের জন্য বা পরিবারকে দেয়ার মতো আর কোনো সময়ই থাকে না। এভাবে চলতে থাকলে সবকিছুতে একঘেয়েমি চলে আসে। কাজ-কর্মেও মন বসে না। ফলে তাদের মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সময়টাকে যদি একটুখানি গুছিয়ে নিয়ে কাজে লাগান, তা হলে দেখবেন সবকিছু তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে আসবে।

রাতেই পরিকল্পনা করুন : পরের দিন সকালে কী রান্না করবেন, অফিসে গিয়ে কী কী কাজ করতে হবে, বাসার জন্য কোনো কেনাকাটা লাগলে, বাচ্চাদের বা পরিবারের কারও জন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তা রাতেই লিখে রাখুন। যাতে ফেরার পথে তা নিয়ে আসতে পারেন। লিখে রাখলে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কাজগুলোও পরিপাটি করে করা যায়।

সময় ভাগ করে নিন : প্রথমেই সময়টাকে নিজের সুবিধামতো ভাগ করে নিন। রাতে একটু বেশি করে সবজি কেটে আলাদা আলাদা বক্সে করে ফ্রিজে রাখুন। এতে করে সকালে ঝটপট রান্নাটা সেরে নিতে পারবেন। টিভি, মোবাইলকে রাত ১১টার মধ্যেই ছুটি দিয়ে দিন। একটু আগে শুয়ে পড়লে সকালে উঠতে সুবিধা হয়। রান্নার আয়োজনটা সহজ রাখুন, যতটা অল্প সময়ে করা যায়।

অফিসের কাজ : সকালে গিয়ে অফিসের কোনো কাজ থাকলে তা কাগজে বা মোবাইলের নোটবুকে লিখে রাখুন। কোন কাজগুলো আগে করা জরুরি সেভাবে সাজিয়ে নিন। অফিসে গিয়েও প্রয়োজন অনুযায়ী একটু গুছিয়ে নিন আজ কোন কাজগুলো করবেন। কাজ আগে শেষ হয়ে গেলে আর হাতে বেশখানিকটা সময় থাকলে কিছু বাড়তি কাজ এগিয়ে রাখুন।

বাজার তালিকা : বেতন পেলেই মাস বাজারের একটি তালিকা করে শুকনো বাজারগুলো সেরে ফেলুন। এতে করে প্রতিদিন বাজারের জন্য সময় নষ্ট হবে না, দুশ্চিন্তাও থাকবে না। মাংস আর মুরগিও মাসেরটা একবারে কিনে কেটে আলাদা করে পেকেট করে রাখুন। তবে কোনো কোনো পরিবারে মুরগিটা সপ্তাহের / দিনই খাওয়া হয়, বিশেষ করে যেসব পরিবারে শিশুরা আছে। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটাদিন প্রতি সপ্তাহের মুরগি কিনে রাখতে পারেন। মাছও সপ্তাহেরটা একবারে কিনে গুছিয়ে রাখুন। আর সবজি / দিন পর পর কিনে নিতে পারেন।

পরিবারের সদস্যদের কাজ ভাগ করে দিন : আমাদের সমাজে একটি বদ্ধ ধারণা আছেÑ ঘরের কাজ শুধু মেয়েদের জন্য। সময়ের সঙ্গে ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে। তাই আপনার পরিবারের ছেলে সদস্যদের মাঝেও কাজ ভাগ করে দিন। এতে করে তাদের মা, বোন, বউয়ের কাজে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে। সমস্ত কাজের দায়িত্ব একার কাঁধে নেবেন না। পরিবারের প্রতিটা সদস্যকে যার যার সামর্থ্য মতো কাজ ভাগ করে দিন। তাতে আপনার কষ্ট আর ব্যস্ততা কমবে, সবাই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন হবে। আপনাকেও মূল্যায়ন করতে পারবে। কেউ আর হুট করে বলে বসবে না- তোমার আর কি কাজ, একটু রান্নাই তো!

নিজের জন্য সময় রাখুন : নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন। ঘরে-বাইরে সারাদিন কাজের পর নিজেকেও সময় দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তাই প্রতিদিন না হোক, সপ্তাহের অন্তত / দিন নিজের জন্য সময় বের করুন। বই পড়ুন, গান শুনুন, বাচ্চাদের সঙ্গে বা পরিবারের অন্যান্যের সঙ্গে সময় কাটান। অফিসেও কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের সঙ্গে ক্যান্টিনে বা ছুটির পর কফিশপে সময় কাটান, মন ফুরফুরে হবে।

ছুটির দিনে অবসর : মাসে অন্তত একদিন ঘরের কাজ থেকে ছুটি নিন। সকালে একটু আয়েশ করে ঘুমিয়ে নিন। সকালের নাশতাটা বাইরে থেকে আনিয়ে নিন। অথবা বিকেলে বা রাতে বাইরে থেকে খেয়ে আসুন। কখনো হুট করেই ঘুরে আসুন কোনো প্রিয় জায়গা থেকে। কখনো বন্ধু-বান্ধবদের সান্নিধ্যে যান।

 একটু গুছিয়ে নিয়ে কাজ করলে আর সবাইকে কাজ ভাগ করে দিলে পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি সহানুভূতি, সহমর্মিতাও বৃদ্ধি পায়। পারস্পরিক সম্মান বোধও তৈরি হয়। নিজের জন্যও সময় পাওয়া যায়। নিজের পরিবার, কাজ সম্পর্কে আমরাই ভালো বুঝি। তাই উল্লিখিতভাবেই নয়, যার যার সুবিধা মতো কাজ গুছিয়ে নিন। হুট করে একদিন কারও কথা না ভেবে নিজের মতো চলুন, বিরতি নিন। নিজেকে বলুনÑ জীবন কত সুন্দর!