ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লড়াকু ক্রিকেটার

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০১:৪২, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

লড়াকু ক্রিকেটার

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত করে চলেছেন বাংলার মেয়েরা

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ক্রীড়াঙ্গন আলোকিত করে চলেছেন বাংলার মেয়েরা। বিশেষ করে দেশের দুই শীর্ষ খেলা ক্রিকেট ও ফুটবলে নিয়মিত আলো ছড়াচ্ছেন লাল-সবুজের দেশের কন্যারা। বিভিন্ন বিভাগে চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের নয়নের মণিতে পরিণত হয়েছেন বাংলার নারী ক্রীড়াবিদরা। 
এ ধারাবাহিকতায় মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ টি২০ বিশ^কাপ ক্রিকেটেও দারুণ চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচের সবকটিতেই জিতে সুপার সিক্সে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে সুপার সিক্সে প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ হেরে যায় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে। এরপরও টুর্নামেন্টে বাংলার মেয়েদের সার্বিক পারফরমেন্স বেশ আশা জাগানিয়া।

এবার প্রথমবার মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ টি২০ বিশ^কাপ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হচ্ছে। প্রাথমিক পর্বে ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশ টানা তিন ম্যাচে দুর্দান্ত জয় তুলে নেয়। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে ৭ উইকেটে, দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কা মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে ১০ রানে হারিয়ে আগেভাগেই সুপার সিক্স নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। গ্রুপের শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৫ উইকেটে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সুপার সিক্সে পা রাখে বাংলাদেশের মেয়েরা।

অন্যদিকে ২০১৮ এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের পর গত বছর প্রথমবারের মতো মেয়েদের বিশ্বকাপেও জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপেও দাপটের সঙ্গে সুপার সিক্সে উঠেছে খুদে টাইগ্রেসরা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ঘরোয়া টি২০ আসর আইপিএলেও তার প্রভাব পড়ছে। ২০১৯ সালে উইমেন্স টি২০ চ্যালেঞ্জের দ্বিতীয় টুর্নামেন্টেই প্রথম জায়গা করে নিয়েছিলেন পেসার জাহানারা আলম।

২০২০ সালে পরের আসরে তার সঙ্গী হন অলরাউন্ডার সালমা খাতুন। সর্বশেষ ২০২২Ñএ সালমার সঙ্গে যুক্ত হয় শারমিন আক্তারের নাম। এবারের মেয়েদের আইপিএলের নিলামে আছেন বাংলাদেশের আট ক্রিকেটার। তারা হলেনÑ সালমা খাতুন, জাহানারা আলম, রুমানা আহমেদ, নিগার সুলতানা, নাহিদা আক্তার, মারুফা আক্তার, রিতু মনি ও স্বর্ণা আক্তার। সম্পূর্ণ নতুন কলেবরে মেয়েদের আইপিএলের নিলাম আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি। টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য সময় মার্চ-এপ্রিল। ছেলেদের ধুন্ধুমার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয় ২০০৮ সালে।

আর উইমেন্টস টি২০ চ্যালেঞ্জ নামে মেয়েদের প্রথম আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। ২০১৯Ñএ দ্বিতীয় আসরেই জায়গা করে নেন জাহানারা। সুন্দরী, সুদর্শনা এই পেসার সেবার খেলেন ভেলোসিটির হয়ে। ফাইনালে তার দল হারে সুপার নোভাসের কাছে। ২০২০ সালে প্রথমবার আইপিএলে পা রেখেই শিরোপার স্বাদ পান অলরাউন্ডার সালমা খাতুন। ফাইনালে তার দল ট্রেইলব্লেজার্স ১৬ রানে হারায় সুপারনোভাসকে। আসরজুড়ে অফস্পিনে সালমাও ছিলেন দুর্দান্ত। আর জাহানারার দল ভেলোসিটি টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় আগেই।

শারাজায় করোনাকালের আইপিএল থেকে সেবার দুই রকম অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফেরেন দুই তারকা সালমা ও জাহানারা। ২০২১ সালের আসরটি অনুষ্ঠিত হয়নি। গত বছর (২০২২) সালমার দল ট্রেইলব্লেজার্সের হয়ে সুযোগ পান শারমিন আখতার। ভারতীয় তারকা স্মৃতি মান্দানার নেতৃত্বে খেলেন তারা। তাদের দল যদিও ফাইনালে উঠতে পারেনি। এবার সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিতে হতে যাচ্ছে মেয়েদের আইপিএল। উইমেন্স টি২০ চ্যালেঞ্জ বদলে নামকরণ হচ্ছেÑ উইমেন্স ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ তথা উইমেন্স আইপিএল।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে ইন্ডিয়ান বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে নিলামের জন্য আট জনের নাম পাঠানো হয়েছে। এদিকে কোনো সন্দেহ নেই, এক দশক ধরে বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে নারী ফুটবল। এই সময়কালে যেখানে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দল মিলিয়ে পুরুষ ফুটবল দল ৩টিতে চ্যাম্পিয়ন ও ৪টিতে রানার্সআপ হয়েছে (মোট ৭টি ফাইনাল), সেখানে নারী দল সিনিয়র ও জুনিয়র দল মিলিয়ে ১১টিতে ফাইনাল খেলে ৯টিতেই শিরোপা জিতেছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল গত বছর সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাটি। প্রতিটি দলেরই কোচ ছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন, যিনি ইতোমধ্যেই নিজেকে নিয়ে গেছেন কিংবদন্তিতুল্য কোচের কাতারে। সবসময়ই কঠিন পরিশ্রমে বিশ্বাস করা বহুল আলোচিত এই দ্রোণাচার্য্য এখন দশম শিরোপার সন্ধানে মরিয়া। নতুন বছরে তার অধীনে নারী ফুটবল দলকে (সিনিয়র এবং বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল) একাধিক ফুটবলীয় পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। এর মধ্যে সবার আগে দিতে হবে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের পরীক্ষা। 
টুর্নামেন্টটি আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় শুরু হবে। চার-জাতি এই টুর্নামেন্টে অংশ নেবে স্বাগতিক বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান। খেলা হবে সিঙ্গেল লিগ ভিত্তিতে। এরপর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুই দল মুখোমুখি হবে ফাইনালে। এই আসরকে সামনে রেখে অনেক আগেই কোমড় বেঁধে নেমে পড়েছেন ছোটন। ৩০ জনের প্রাথমিক দল নিয়ে নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন কঠোর অনুশীলন। এই আসরে ভালো কিছু করে দেখাতে চায় স্বাগতিক বাংলাদেশ।

×