
.
প্রকৃতিতে বইছে মাঘের শৈত্যপ্রবাহ। দুপুরের প্রখর রোদের তাপও শীতল অনুভূতি দিচ্ছে। শীত মৌসুম বরাবরই বেশ ছন্দময়। পিঠাপুলির উৎসব, ভ্রমণে যাওয়া, বাহারী ডিজাইনের পোশাক পরে নিজেকে ফ্যাশনেবল করা। সবকিছুই যেন একই সুরের মূর্ছনা দেয়। নব্বই দশকের মা-বাবাদের কাছে শীতের অন্যতম পোশাক ছিল শাল বা চাদর। ছোটরা উষ্ণতা পেতে কখনো কখনো সেই চাদরে আশ্রয় নিত। সে সময়ের স্কুলের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে দেখা যেত। পুরুষ শিক্ষকগণ গায়ে একটি জাম্পার এবং তার উপরে বড় একখানা চাদর জড়িয়ে রেখেছেন। আর নারী শিক্ষকদের শাড়ির সঙ্গে শাল ছিল তাদের অন্যতম শীত পোশাক। অবশ্য স্কুলের শিক্ষকরা এখনো শাড়ির সঙ্গে শাল পরতেই বেশি পছন্দ করেন।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পোশাকে এসেছে বৈচিত্র্য। বাহারী ডিজাইনের শীত পোশাক থাকলেও শালের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি নিঃসন্দেহে। দেখা যায় রাস্তার পাশে বসে যে নারী পিঠা বিক্রি করছেন তার গায়ে একটি সোয়েটারের উপরে চাদর জড়ানো। আর যে তরুণ সেই পিঠা কিনছে তার উষ্ণতার জন্যও গায়ে শাল দিয়েছেন সঙ্গে রয়েছে অভিজাত্য ভাব। আগের দিনে রাজা-মহারাজারা আভিজাত্যের নিদর্শন হিসেবে কাঁধে ঝুলিয়ে নিতেন রাজকীয় কারুকাজ করা একটি শাল। বণিক সম্প্রদায়ের লোকজনও চাদর বা শাল ঝুলিয়ে নিতেন পারিবারিক ঐতিহ্য বা আভিজাত্য হিসেবেই। এর সার্বজনীনতা অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় নাই। তবে অঞ্চল ভেদে এই শাল ব্যবহারে রয়েছে ভিন্নতা।
বাঙালী শাড়ি যেমন নানা ঢঙে এবং নানা কায়দায় পড়া যায় ঠিক তেমনি শাল ব্যবহারেও রয়েছে নানা স্টাইল। সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি যাই হোক না কেন শালের কদর রয়েছে সবজায়গায়। শীতকালীন বিয়ের উৎসব বা অনুষ্ঠানে শাল ব্যবহৃত হয় ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে। বিভিন্ন রং, কাটিং এবং ডিজাইনের শাল ফ্যাশন সচেতন নারীদের আকৃষ্ট করে। তাই উৎসবে শাড়ির সঙ্গী হয় শাল। এই বস্ত্রটি ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ব্যবহার করছে। তবে চাদরের মান অনুযায়ী রয়েছে ভিন্নতা। মানসম্মত একটি শাল ভিন্ন রূপ ও ট্রেন্ডি ভাব নিয়ে আসে। উৎসব-অনুষ্ঠানে এটি আভিজাত্য প্রকাশ করে। আবার রাস্তার পাশে যে চাদর জড়িয়ে গায়ে তা দিচ্ছেন তিনিও এক ধরনের ঐতিহ্য বহন করে। তাই এর প্রয়োজনীয়তা ও সৌন্দর্য সবজায়গায় লক্ষণীয়। তরুণ-তরুণীরা বাইরে ঘুরতে যাওয়া কিংবা আড্ডা দেওয়ার সময় পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে একটি শাল পরতে পারেন। যা দিবে ট্রেন্ডি লুক। ফ্যাশনে ভিন্ন লুক আনতে ব্যবহার করা যায় পাতলা রঙিন শাল। রং এবং প্রিন্ট সুন্দর হওয়ায় অনেক তরুণী শীতের সময়ে এটি ওড়নার পরিবর্তে ব্যবহার করে থাকেন। গাঢ় শেডের সবুজ, মেরুন ও রয়েল ব্লু শাল বেছে নিতে পারেন যা হবে ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ। একটি ফ্যাশনেবল শাল পোশাকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এ বস্ত্রটির যে কত কদর এবং বৈচিত্র্য রয়েছে তা টের পাওয়া যায় বাণিজ্য মেলায় শালের স্টলগুলোতে গেলে। প্রতিটি স্টলেই রয়েছে আকর্ষণীয় কারুকার্যের শাল। যা সুন্দর রং ও পাতলা কাপড় দিয়ে তৈরি। এসবের মধ্যে বিখ্যাত হলো কাশ্মীরি শাল। এর সুখ্যাতি উপমহাদেশের গ-ি পেরিয়ে ইউরোপের মাটিতে চলে গেছে বহু আগেই।
বাণিজ্য মেলা শীতকালে আয়োজিত হয় বিধায় কাশ্মীরি শালের দোকানে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। ২০২৩ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জানা যায় আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে কাশ্মীরি শাল তৈরি করা হয় নেপাল ও কাশ্মীরে। যা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মহিলাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ধীরে ধীরে এই জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোও শীত মৌসুম শুরু হলেই তৈরি করে সুন্দর রং এবং ডিজাইনের শাল। এছাড়াও ছোট-বড় সবধরনের শপিংমলে পাওয়া যায় আকর্ষণীয় চাদর বা শাল।
দাম : বিভিন্ন দামের শাল দেখা যায় ছোট বড় সকল মার্কেটে। তবে ভালো মানের শালগুলোর দাম একটু বেশি। এগুলো ২ হাজার থেকে ৮ হাজারের মধ্যে পাওয়া যাবে। আর কম দামীয় শালগুলো ৩শ’ থেকে ১৫শ’ টাকার মধ্যেই পাওয়া যায়।