ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খাওয়ার পর যে কারণে ঘুম পেলে যা করণীয়

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩

খাওয়ার পর যে কারণে ঘুম পেলে যা করণীয়

ঘুম

বেশি খেয়ে আরামের ঘুম দেওয়া রাতে সুখকর হলেও দুপুরে খাবারের পর ঘুম পেলে কাজের বারোটা বাজাই স্বাভাবিক। তবে বেশিরভাগ সময় খাওয়ার পর ঘুম পেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর দরকার। কারণ এই পরিস্থিতি থেকে ডায়াবেটিসও হতে পারে। খাওয়ার পরে ঘুম পাওয়ার অবস্থাকে ‘ফুড কোমা’ বলা হয়।

লক্ষণগুলো হল

ঘুম ঘুমভাব, তন্দ্রা ও আলস্য, পরিশ্রান্ত, ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব।

‘ফুড কোমা’ নাম দেওয়া হলেও, এক্ষেত্রে পুরোপুরি অজ্ঞান হওয়াকে বোঝায় না। চরম শারীরিক আঘাতেই একমাত্র অজ্ঞান হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

কারণ

* উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও লবণাক্ত খাবার বেশি খেলে ঘুম পেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইন্সটিটিউট’, ‘ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি’, ‘হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’ করা ২০১৬ সালের গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া যায়।

* উচ্চ মাত্রায় কার্বোহাইড্রেইট, চর্বি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলেও ‘ফুড কমা’ হতে পারে। কারণ এসবের উৎস হল ট্রিপ্টোফ্যান।

এই বিষয়ে ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’স কেক স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজ দাশগুপ্তা সিএনএন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সেরোটনিন হরমোন তৈরিতে অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপ্টোফ্যান প্রয়োজন। এই হরমোন শরীরের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। এর মধ্যে ঘুম ও মেজাজের ভারসাম্যতাও রয়েছে।”

“ট্রিপ্টোফ্যান থেকে সেরোটনিন তৈরির পর্যায়ে ‘বাইপ্রোডাক্ট’ বা উপজাত হিসেবে তৈরি হয় মেলাটনিন হরমোন, যা ঘুমচক্র পরিচালনা করে।” বলেন এই অধ্যাপক।

তিনি আরও জানান, আমাদের দেহ ট্রিপ্টোফ্যান প্রস্তুত করতে পারে না। খাবারই এর উৎস।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ জানাচ্ছে- মুরগি ও টার্কি ছাড়াও ডিম, পনির, মাছ, দুধ, বাদাম, কুমড়ার বীজ ও তিলেও থাকে ট্রিপ্টোফ্যান।

তাই এই ধরনের খাবার বেশি খাওয়া হলে ঘুম লাগাটাই স্বাভাবিক। এছাড়া সাদা ভাতের মতো শষ্য যেগুলো বেশি মাত্রায় পরিশোধিত, সেসব খেলে রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে মস্তিষ্ক ক্লান্ত করে দেয়। ফলে শরীরে অবসাদ, ক্লান্তি তন্দ্রা দেখা দেয়।

বেশি বলতে যা বোঝায়

সিএনএন’য়ের প্রতিবেদনে নিউ জার্সির ‘রাটগার্জ ইউনিভার্সিটি’র ‘কিনিজিওলজি’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্টিভেন মালিন বলেন, “সেরোটনিন মন ভালো রাখার হরমোন হিসেবেও পরিচিত। যা কি-না শরীরকে আরাম ও শান্ত বোধ করায়।”

অল্পস্বল্প মুরগি বা টার্কির মাংস খেলে ঘুম পাবে না। তবে ঘুম পাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মাত্রায় সেরোটনিন তৈরিতে যে পরিমাণ ট্রিপ্টোফ্যান প্রয়োজন, সেজন্য খেতে হবে আট পাউন্ড বা সাড়ে তিন কেজি মাংস।

এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নর্দানওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’জ ফাইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ঘুম বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টেন নাটসন সিএনএন’কে বলেন, “এই পরিমাণ মুরগি বা টার্কির মাংস এক বসায় খাওয়া সম্ভব না। তাই শুধু এই মাংস খেলেই ঘুম পাবে তা নয়। এর সঙ্গে অন্যান্য খাবার, যেমন- ভাত, রুটি, পনির, আলু, মিষ্টিান্ন বা যেসব খাবার ট্রিপ্টোফ্যানের উৎস সেসব-সহ খাওয়া হলেই ঘুম পাবে।”

এছাড়াও রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলেও বেশি খাওয়ার পর ঘুম পায়। কারণ খাওয়ার পর শরীর শিথিল হয়ে যায়।

ডা. দাশগুপ্তা আরেকটা কারণ উল্লেখ করেন।

তার কথায়, “বেশি খাওয়ার পর হজম প্রক্রিয়ার জন্য বেশি রক্ত সঞ্চালন দরকার হয় পাকস্থলীতে। ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে। যা শরীরকে ক্লান্ত করে ঘুম আনায়।”

ঘুমের পরিমাণ

যদিও এই বিষয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। তবে বেশি খাওয়ার ফলে একজন চার ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ‘ইউনিভার্সিটি অফ বাথ’, ‘লাফবোরাহ ইউনিভার্সিটি’, ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’ ও থাইল্যান্ডের ‘মাহিডোল ইউনিভার্সিটি’র মিলিতভাবে করা গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে হেল্থলাইন ডটকম এই তথ্য জানায়।

খাওয়ার পর তন্দ্রাভাব এড়াতে করণীয়

কাজের মধ্যে খাওয়ার পর ঘুম পাওয়া বিরক্তিকর। এই পরিস্থিতি এড়াতে কিছু বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

পরিমিত খাওয়া: বেশি খেলে ঘুম পাবেই। তাই কম ও পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

সুষম খাবার খাওয়া: প্রাণিজ চর্বি, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অ্যালকোহল এড়াতে হবে।

আর্দ্র থাকা: পানিশূন্যতার কারণে ক্লান্ত লাগে। তাই আর্দ্র থাকার জন্য সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানের অভ্যাস গড়তে হবে।

রাতে ভালো ঘুম: বাজে ও অল্প ঘুম হলে সারাদিন তন্দ্রাভাব থাকবেই। তাই রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।

উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে থাকা: উজ্জ্বল সাদা আলো শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যা কিনা খাওয়ার পর ঘুম ঘুমভাব কাটাতেও কার্যকর। তাই কর্মক্ষেত্রে আলোর মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে।

ক্ষুদ্র ঘুম: এত কিছুর পরও ঘুম পেলে ‘ন্যাপ’ নেওয়া যেতে পারে। ত্রিশ মিনিটের অল্প মাত্রায় ঘুম মস্তিষ্কের কর্মশক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। তাই খাওয়ার পর ঘুম পেলে জোর করে চোখ খুলে রাখার চাইতে অল্প ঘুমে ক্লান্তি ঝরিয়ে ফেলাই হবে ভালো পন্থা।

এমএস

×