.
এখন চলছে মিষ্টি ফলের রসে ভরা মাস। এই সময়টাতে বাংলাদেশে দেশীয় ফলের সবচেয়ে বেশি সমারোহ ঘটে। এর মধ্যে আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, লটকন, আনারস প্রভৃতি ফল অন্যতম। যদিও এই সময় প্রচুর ফল পাওয়া যায়, তবুও ব্যক্তি পর্যায়ে বা ঘরোয়াভাবে এগুলোকে সংরক্ষণ করা বেশ কঠিন। তবে এর মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম হলো আম। আমকে অতি সহজভাবে কার্যকরী পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়। অনেকে আস্ত আম ডিপ ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করেন, কিন্তু তাতে তেমন কোন ভাল ফল পাওয়া যায় না। এই পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করলে আম অত্যন্ত শক্ত হয়ে যায় এবং স্বাদ, গন্ধ একেবারেই থাকে না। যার দরুন এই পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করে তেমন কোন লাভ হয় না।
আম সংরক্ষণের জন্য আমের মণ্ড বা জুস আকারে সংরক্ষণ করা উত্তম। আম ভালভাবে সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমেই আসে প্রিজারভেটিভের কথা। ভাবতে হয়, কোন প্রিজারভেটিভ দিয়ে বেশিদিন আমের স্বাদ ও গন্ধ অটুট রেখে ভালভাবে সংরক্ষণ করা যায়। আম সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ রয়েছে।
তবে এদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। আমের মণ্ড বা জুস ঘরোয়াভাবে সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ প্রিজারভেটিভ হলো ‘এসকরবিক এসিড’ যা আমরা ভিটামিন-সি হিসেবে জানি। প্রিজারভেটিভের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে খুব সহজে আম সংরক্ষণ করা যায়।
আম সংরক্ষণের পদ্ধতি নিচে দেয়া হলো
উপকরণসমূহ : সতেজ পাকা আম, এসকরবিক এসিড অর্থাৎ ভিটামিন-সি ট্যাবলেট (যেমন- Ceevi : ২৫০mg বা Ascobex ২৫০mg), লেবু, চিনি, ব্লেন্ডার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ।
কার্যপদ্ধতি : আম সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই প্রতি কেজি আমের জন্য দুইটি ভিটামিন-সি ট্যাবলেট ভালভাবে গুঁড়া করে এক কাপের তিনভাগের একভাগ পানিতে ভিজিয়ে রেখে গুলিয়ে নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, যদি ভিটামিন-সি ট্যাবলেটের পরিমাণ বেশি হয়, তবে সেক্ষেত্রে আমের মধ্যে পাউডারের একটা কটু গন্ধ চলে আসবে। তাই পরিমাণ যাতে বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া লেবু থেকেও কিছু ভিটামিন-সি পাওয়া যাবে। তারপর কিছু সতেজ আম বাছাই করে (এখানে এক কেজি পরিমাণ আম সংরক্ষণের কার্যপদ্ধতি উল্লেখ করা হলো) পানি দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে ছিলে নিতে হবে। আমগুলো হাত দিয়ে ভালভাবে চিপে নিন। আমের মণ্ডের টুকরো যদি আকারে বড় হয়, তবে সেগুলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে ভাল করে ডলে দিতে হবে। এবার তার সঙ্গে জ্জ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। পুর্বে গুলিয়ে রাখা ভিটামিন-সি ও একটা মাঝারি সাইজের লেবুর অর্ধেক ভালভাবে চিপে সেই রস আমের মধ্যে দিন। লেবুতেও এসকরবিক এসিড বা ভিটামিন-সি, সাইট্রিক এসিড এবং অন্যান্য উপাদান থাকে। এসব উপাদান আমের স্বাদ ও গন্ধ দীর্ঘদিন অটুট রাখতে সাহায্য করে। এবার সব উপাদান একত্রে ভালভাবে নেড়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে। এ অবস্থায় পুরো মিশ্রণটিকে প্রায় ত্রিশ মিনিট ঢেকে রেখে দিন। ত্রিশ মিনিট পর আবার হাত অথবা চামচ দিয়ে মিশ্রণটিকে ভালভাবে মেশান।
সংরক্ষণের শেষ পর্যায়ে প্লাস্টিক অথবা কাচের কৌটায় পরিমাণমতো আম নিতে হবে, যাতে কৌটার উপর সামান্য ফাঁকা থাকে। এবার ভাল করে ঢাকনা লাগিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। কৌটায় এমন পরিমাণ আম নিন, যাতে এক কৌটা একবারে খেয়ে নেয়া যায়। দরকার হলে কৌটার উপরে মার্কার কলম দিয়ে তারিখ লিখে রাখতে পারেন।
এভাবে প্রায় আট-দশ মাস আম খুব ভালভাবে সংরক্ষণ করা যায়। সেই আম খেতে চাইলে ফ্রিজ থেকে বের করে কৌটার ঢাকনা খুলে রাখুন। বরফ গলে যাওয়ার পর সেটার সঙ্গে দরকার হলে আরও চিনি, দুধ মিশিয়ে খাওয়া যাবে। আর যদি জুস আকারে খেতে চান, তাহলে পরিমাণমতো পানি ও চিনি মিশিয়ে ব্লেন্ডার দিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করে পরিবেশন করুন। স্বাদ-গন্ধ এমনই অটুট থাকবে যে, বোঝাই যাবে না সেটা কয়েক মাস আগে সংরক্ষণ করা আম।
লেখক : অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুরারিচাঁদ (এমসি)
কলেজ, সিলেট