ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

.

আম সংরক্ষণ

গোলাম আহমদ খান

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ৩ জুলাই ২০২২

আম সংরক্ষণ

.

এখন চলছে মিষ্টি ফলের রসে ভরা মাসএই সময়টাতে বাংলাদেশে দেশীয় ফলের সবচেয়ে বেশি সমারোহ ঘটেএর মধ্যে আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, লটকন, আনারস প্রভৃতি ফল অন্যতমযদিও এই সময় প্রচুর ফল পাওয়া যায়, তবুও ব্যক্তি পর্যায়ে বা ঘরোয়াভাবে এগুলোকে সংরক্ষণ করা বেশ কঠিনতবে এর মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম হলো আমআমকে অতি সহজভাবে কার্যকরী পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়অনেকে আস্ত আম ডিপ ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করেনকিন্তু তাতে তেমন কোন ভাল ফল পাওয়া যায় নাএই পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করলে আম অত্যন্ত শক্ত হয়ে যায় এবং স্বাদ, গন্ধ একেবারেই থাকে নাযার দরুন এই পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করে তেমন কোন লাভ হয় না

আম সংরক্ষণের জন্য আমের মণ্ড বা জুস আকারে সংরক্ষণ করা উত্তমআম ভালভাবে সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমেই আসে প্রিজারভেটিভের কথাভাবতে হয়, কোন প্রিজারভেটিভ দিয়ে বেশিদিন আমের স্বাদ ও গন্ধ অটুট রেখে ভালভাবে সংরক্ষণ করা যায়আম সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রিজারভেটিভ রয়েছে

তবে এদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়আমের মণ্ড বা জুস ঘরোয়াভাবে সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ প্রিজারভেটিভ হলো এসকরবিক এসিডযা আমরা ভিটামিন-সি হিসেবে জানিপ্রিজারভেটিভের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে খুব সহজে আম সংরক্ষণ করা যায়

 

আম সংরক্ষণের পদ্ধতি নিচে দেয়া হলো

উপকরণসমূহ : সতেজ পাকা আম, এসকরবিক এসিড অর্থা ভিটামিন-সি ট্যাবলেট (যেমন- Ceevi : ২৫০mg বা Ascobex ২৫০mg), লেবু, চিনি, ব্লেন্ডার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ

কার্যপদ্ধতি : আম সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই প্রতি কেজি আমের জন্য দুইটি ভিটামিন-সি ট্যাবলেট ভালভাবে গুঁড়া করে এক কাপের তিনভাগের একভাগ পানিতে ভিজিয়ে রেখে গুলিয়ে নিতে হবেতবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে, যদি ভিটামিন-সি ট্যাবলেটের পরিমাণ বেশি হয়, তবে সেক্ষেত্রে আমের মধ্যে পাউডারের একটা কটু গন্ধ চলে আসবেতাই পরিমাণ যাতে বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবেএছাড়া লেবু থেকেও কিছু ভিটামিন-সি পাওয়া যাবেতারপর কিছু সতেজ আম বাছাই করে (এখানে এক কেজি পরিমাণ আম সংরক্ষণের কার্যপদ্ধতি উল্লেখ করা হলো) পানি দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে ছিলে নিতে হবেআমগুলো হাত দিয়ে ভালভাবে চিপে নিনআমের মণ্ডের  টুকরো  যদি  আকারে বড় হয়, তবে সেগুলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে ভাল করে ডলে দিতে হবেএবার তার সঙ্গে জ্জ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে নিনপুর্বে গুলিয়ে রাখা ভিটামিন-সি ও একটা মাঝারি সাইজের লেবুর অর্ধেক ভালভাবে চিপে সেই রস আমের মধ্যে দিনলেবুতেও এসকরবিক এসিড বা ভিটামিন-সি, সাইট্রিক এসিড এবং অন্যান্য উপাদান থাকেএসব উপাদান আমের স্বাদ ও গন্ধ দীর্ঘদিন অটুট রাখতে সাহায্য করেএবার সব উপাদান একত্রে ভালভাবে নেড়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবেএ অবস্থায় পুরো মিশ্রণটিকে প্রায় ত্রিশ মিনিট ঢেকে রেখে দিনত্রিশ মিনিট পর আবার  হাত অথবা চামচ দিয়ে মিশ্রণটিকে ভালভাবে মেশান

সংরক্ষণের শেষ পর্যায়ে প্লাস্টিক অথবা কাচের কৌটায় পরিমাণমতো আম নিতে হবে, যাতে কৌটার উপর সামান্য ফাঁকা থাকেএবার ভাল করে ঢাকনা লাগিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিনকৌটায় এমন পরিমাণ আম নিন, যাতে এক কৌটা একবারে খেয়ে নেয়া যায়দরকার হলে কৌটার উপরে মার্কার কলম দিয়ে তারিখ লিখে রাখতে পারেন

এভাবে প্রায় আট-দশ মাস আম খুব ভালভাবে সংরক্ষণ করা যায়সেই আম খেতে চাইলে ফ্রিজ থেকে বের করে কৌটার ঢাকনা খুলে রাখুনবরফ গলে যাওয়ার পর সেটার সঙ্গে দরকার হলে আরও চিনি, দুধ মিশিয়ে খাওয়া যাবেআর যদি জুস আকারে খেতে চান, তাহলে পরিমাণমতো পানি ও  চিনি মিশিয়ে ব্লেন্ডার  দিয়ে ভাল করে ব্লেন্ড করে পরিবেশন করুনস্বাদ-গন্ধ এমনই অটুট থাকবে যে, বোঝাই যাবে না সেটা কয়েক মাস আগে সংরক্ষণ করা আম

লেখক : অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুরারিচাঁদ (এমসি)

কলেজ, সিলেট

×