
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ থেমে নেই। বরং সময় যত গড়াচ্ছে, ততই নিখুঁত, সাহসী ও সুপরিকল্পিত হয়ে উঠছে হামাসের প্রতিরোধ অভিযান। একদল যোদ্ধা—মাত্র ১২ জন—একটি সুসজ্জিত টানেল দিয়ে গোপনে বেরিয়ে এলো, চোখে আগুন, হাতে গ্রেনেড ও রাইফেল, লক্ষ্য ছিল ইসরাইলি সেনাদের সরবরাহ রুট। হামলার আগে তারা এলাকা পর্যবেক্ষণ করে ছদ্মবেশে অবস্থান নেয়। তারপর আচমকা শুরু হয় বিস্ফোরণ, গুলি আর চিৎকার—খান ইউনিস মুহূর্তেই রূপ নেয় রণক্ষেত্রে।
ইসরাইলি মিডিয়ার দাবি, এই অ্যামবুশ চালিয়েছে হামাসের সংশ্লিষ্ট ‘ফিদিয়ান ইউনিট’। তারা আগে থেকেই টানেল দিয়ে এলাকা দখলে নেয় এবং সেনাদের ঘিরে ফেলে। শেষ মুহূর্তে ইসরাইল বাহিনী পরিকল্পনাটি ভেস্তে দিলেও অপারেশনটি সফল হলে ব্যাপক প্রাণহানি হতো বলে সতর্কতা দিয়েছে ইসরাইল আর্মি রেডিও।
গাজায় চলমান প্রায় ১০ মাসের যুদ্ধেও হামাসের গোয়েন্দা সক্ষমতা ও সামরিক কৌশল রয়ে গেছে দৃঢ়। এর আগে ১৭ জুলাই আল কাসাম ব্রিগেড একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে কয়েকজন ইসরাইলি বন্দিকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। ওই মাসেই আলজাজিরা সম্প্রচার করে আল কাসাম বাহিনীর আরেকটি অপারেশনের ফুটেজ, যেখানে তারা ইসরাইলি সেনা অপহরণের চেষ্টা চালায়। অপারেশনটি সম্পূর্ণ সফল না হলেও ভবিষ্যতে অপহরণ অভিযান আরো নিখুঁত হবে বলে জানায় কাসাম বাহিনী।
রাফার কাছে আরেক হামলার ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সামরিক যান বিস্ফোরণে উড়ে যাচ্ছে—যেখানে নিহত হয় দুই ইসরাইলি সেনা এবং আহত হয় আরও চারজন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ৮৯৮ জন ইসরাইলি সেনা। তবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর দাবি, এই সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম দেখানো হচ্ছে।
মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও প্রতিরোধ বাড়ছে। সম্প্রতি আল কুস ব্রিগেড এক ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে ২২ বছর বয়সী বন্দি ইসরাইলি রাম বারসলাভসকি ক্লান্তভাবে কাঁদছেন, বলছেন তার খাবার নেই, পানি নেই, এমনকি বাথরুমে যাওয়ার শক্তিও নেই। সে ভিডিওতে নিজের অসহায়তার পাশাপাশি গাজার শিশুদের কষ্টের কথাও তুলে ধরে এবং আবেগভরা কণ্ঠে অনুরোধ জানায়—"আমার জন্য না হোক, গাজার শিশুদের জন্য খাবার পাঠান। তারা না খেয়ে মরছে। এমন দৃশ্য আমি জীবনে কখনো দেখিনি।"
এই চিত্রই এখন গাজার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরোধ ও মানবিকতার বাস্তবতা—যেখানে প্রতিটি হামলা আর প্রতিটি ভিডিও যেন পৃথিবীকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, গাজা এখনও লড়ছে।
শেখ ফরিদ