ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

সারি সারি কবর, নেই পরিচয়

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৩১ জুলাই ২০২৫

সারি সারি কবর, নেই পরিচয়

ছবি: সংগৃহীত

উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত মানুষ। বৈধ পথ এড়িয়ে জীবনবাজি রেখে পাড়ি জমানো এই অভিবাসনযাত্রা অনেকের কাছে আর কোনো আশার আলো নয়, বরং পরিণত হয়েছে এক নির্মম মৃত্যু যাত্রায়। ইউরোপের প্রবেশমুখে ইতালি, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশে গড়ে উঠেছে অভিবাসীদের অজানা কবরস্থানের দীর্ঘ তালিকা—যেখানে মৃতদেহের পাশে নাম নেই, পরিচয় নেই—শুধু একটি শব্দ লেখা থাকে: “অভিবাসী”।

 

 

গ্রিসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এভরস অঞ্চলের একটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এক কবরস্থানে এমনই এক নিঃসঙ্গ দুপুরে মৃতদের আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাতে বসেছেন ৭৩ বছর বয়সী মেহেমেদ শরীফ দামাদলুক। এই কবরস্থানে দাফন করা হয় সেইসব অভিবাসীদের, যারা স্থলপথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে প্রাণ হারান। বিশেষ করে গ্রিস-তুরস্ক সীমান্তবর্তী এভরস নদীকে অনুপ্রবেশের একটি ঝুঁকিপূর্ণ রুট হিসেবে ব্যবহার করেন বহু মানুষ। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যমতে, গত ১১ বছরে শুধুমাত্র এই রুটে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজারের বেশি মানুষ—যাদের বেশিরভাগেরই পরিচয় অজানা রয়ে গেছে।

ইউরোপে প্রবেশের আরেকটি প্রধান রুট হলো ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় ল্যাম্পেদুসা দ্বীপ। তিউনিশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে রাবারের নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে হাজারো মানুষ প্রতিবছর এই দ্বীপে পাড়ি জমায়। তবে অনেকেই উত্তাল ভূমধ্যসাগরের ঢেউয়ে হারিয়ে যায়। যাদের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়, তাদের দাফন করা হয় ল্যাম্পেদুসার স্থানীয় কবরস্থানে—যেখানে এপিটাফে লেখা থাকে না কোনো নাম, কোনো দেশ—শুধু লেখা থাকে ‘অভিবাসী’।

 

 

এছাড়া ইউরোপে পৌঁছানোর আগেই আফ্রিকার জলসীমায় দুর্ঘটনায় পড়েন বহু মানুষ। অধিক যাত্রী বহনকারী নড়বড়ে নৌকা, খারাপ আবহাওয়া কিংবা অতিরিক্ত সময় ধরে ভেসে থাকার কারণে মৃত্যু ঘটে অসংখ্য মানুষের। এইসব পরিচয়হীন মরদেহের শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে মৌরিতানিয়ার ‘সাঈদ কবরস্থান’। ২০২৪ সালে দেশটির উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক অভিবাসীর মৃতদেহ। চলতি বছরের প্রথম কয়েক মাসেই এমন মৃতদেহ পাওয়া গেছে শতাধিক।

এই বাস্তবতা কেবল পরিসংখ্যান নয়, মানবতার এক নিঃসঙ্গ কান্না। যেখানে প্রত্যাশা ছিল নতুন জীবনের, সেখানে রেখে যেতে হয়েছে চিরন্তন নীরবতা। এইসব অজানা কবরগুচ্ছ ভবিষ্যৎ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য হয়ে উঠছে এক তীব্র সতর্ক সংকেত—স্বপ্ন দেখার আগে প্রয়োজন বাস্তবতা বোঝার। যে যাত্রা শুরু হয় জীবনের আশায়, তা যেন আর পরিণত না হয় মৃত্যুর অভিমুখে।

ছামিয়া

×