ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

গাজায় ‘মানবিক নগরী’ গড়ার পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর, বিরোধিতায় সেনাবাহিনীসহ মানবাধিকার সংগঠন

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ১৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:০৮, ১৪ জুলাই ২০২৫

গাজায় ‘মানবিক নগরী’ গড়ার পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর, বিরোধিতায় সেনাবাহিনীসহ মানবাধিকার সংগঠন

গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘মানবিক নগরী’ গড়ার নামে একটি বিতর্কিত পরিকল্পনা অবশেষে ভেস্তে গেল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবল আপত্তির মুখে। দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম সোমবার এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।গত সপ্তাহে ইসরায়েল সরকার গাজা উপত্যকার পুরো জনসংখ্যাকে রাফাহ শহরের ধ্বংসস্তূপের ওপর গড়ে তোলা নতুন একটি এলাকায় স্থানান্তর করার প্রস্তাব দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজাবাসীদের এই নতুন স্থানে আটকে রাখা হবে এবং সেখান থেকেই তাদের বিদেশে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ।

তবে এই পরিকল্পনাকে ‘ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে এসেছে।

এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতারাও এত বড় বাজেটের প্রকল্পকে ‘ঘনবসতিপূর্ণ বন্দিশিবির’ বা ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’-এর সঙ্গে তুলনা করে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। সেনাবাহিনীর মতে, এমন একটি পরিকল্পনা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, রবিবার রাতে এক উত্তপ্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করেন। বৈঠকে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান আয়াল জামিরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, "আমি একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা চেয়েছিলাম। আগামীকাল ভোরের মধ্যে একটি সস্তা এবং দ্রুত বিকল্প প্রস্তুত করুন।"

বৈঠকে সেনাপ্রধান জামির এবং কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের মধ্যে মুখোমুখি বিরোধ দেখা দেয়। জামির হুঁশিয়ারি দেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সেনাবাহিনীর মূল কৌশলগত লক্ষ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, গাজায় এমন একটি নতুন নগরী গড়ে তুলতে কয়েক মাস থেকে এক বছরেরও বেশি সময় লাগবে। তারা আরও শঙ্কা প্রকাশ করে যে, হামাস এই পরিকল্পনাকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটি আংশিক চুক্তির সূচনা হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারে এবং যুদ্ধবিরতির পর যুদ্ধ আবার শুরু হওয়ার ইঙ্গিত হিসেবেও নিতে পারে।

তবে আন্তর্জাতিক সমাজের যুদ্ধবিরতির দাবি উপেক্ষা করে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় নিরন্তর সামরিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত এই আক্রমণে ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংস হয়ে গেছে গাজার অবকাঠামো, চরম খাদ্য সংকট আর ভয়াবহ রোগব্যাধির বিস্তারে ধুঁকছে উপত্যকাটি।

গত নভেম্বরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এ ছাড়া গাজা যুদ্ধকে ঘিরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে একটি মামলাও চলছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।

গাজা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে এই ‘মানবিক নগরী’ গড়ার পরিকল্পনা একদিকে যেমন ইসরায়েলি রাজনীতিতে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশটির অবস্থানকেও আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/mrxp9jxz

আফরোজা

×