ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ছেলেদের সঙ্গে কথা বলায়, শর্টস পরায় অপমান, রাধিকার মৃত্যু নিয়ে বান্ধবীর বিস্ফোরক দাবি

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:৩৪, ১৩ জুলাই ২০২৫

ছেলেদের সঙ্গে কথা বলায়, শর্টস পরায় অপমান, রাধিকার মৃত্যু নিয়ে বান্ধবীর বিস্ফোরক দাবি

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে ২৫ বছর বয়সী টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবকে গুলি করে হত্যা করেছেন তার বাবা দীপক যাদব—এমন ঘটনায় স্তম্ভিত ক্রীড়াঙ্গন। ঘটনার তিন দিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আবেগঘন ভিডিও প্রকাশ করে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন রাধিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহ-টেনিস খেলোয়াড় হিমাংশিকা সিং রাজপুত।

হিমাংশিকা অভিযোগ করেন, রাধিকার জীবনের প্রতিটি দিকেই তার বাবার ছিল কঠোর নিয়ন্ত্রণ।

‘আমার প্রিয় বন্ধু রাধিকাকে ওর নিজের বাবাই খুন করেছে। পাঁচটি গুলি ছোড়ে, যার চারটি ওর শরীরে লাগে। দীর্ঘদিন ধরে বাবার মানসিক অত্যাচার, নেতিবাচক মন্তব্য, এবং কেরিয়ারে হিংসুক লোকদের কথা শুনেই এই পরিণতি,’—সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেগঘন বার্তায় জানান হিমাংশিকা।

হিমাংশিকার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘সে শর্টস পরলে অপমান করা হতো। ছেলেদের সঙ্গে কথা বললে কটূ মন্তব্য শুনতে হতো। নিজের মতো করে জীবন কাটানোর চেষ্টা করলেই বাধা আসতো।’

রাধিকা নিজের টেনিস অ্যাকাডেমি গড়ে তুলেছিলেন এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে যথেষ্ট সফলতাও পেয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

হিমাংশিকা বলেন, ‘আমরা ২০১২/১৩ সাল থেকে একসঙ্গে খেলছি। কোথাও যেতে হলে, কার সঙ্গে আছে তা বাবা-মাকে ভিডিও কলে দেখাতে হতো। এমনকি আমিও ক্যামেরায় এসে প্রমাণ দিতাম আমি ছাড়া কেউ নেই। তার অ্যাকাডেমি বাসা থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরেও সে কখনো দেরি করে যেতে পারতো না।’

তিনি আরও বলেন, রাধিকা ছবি তুলতে, ভিডিও বানাতে পছন্দ করতো—কিন্তু ধীরে ধীরে সব ছেড়ে দেয়। কারণ পরিবার তার স্বাধীনতা পছন্দ করতো না।

রাধিকার এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ‘ধর্মীয় কারণে হত্যা’ অর্থাৎ ‘লাভ জিহাদ’ এর গুজব ছড়ালেও হিমাংশিকা তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন।

‘কোথায় প্রমাণ? রাধিকা খুব কম মানুষের সঙ্গে কথা বলতো। পরিবার তাকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। তার ঘর কখনো স্বাধীন জায়গা ছিল না।’

পুলিশের তদন্তে যা জানা গেছে

পুলিশ জানায়, গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৭-তে অবস্থিত দুই তলা বাড়িতে দীপক যাদব নিজের মেয়েকে গুলি করেন। পাঁচটি গুলির মধ্যে চারটি লাগে রাধিকাকে—তিনটি পেছনে, একটি কাঁধে। হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।

ঘটনার পর দীপককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়, পরে পাঠানো হয় বিচারিক হেফাজতে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও গুলির খোসা।

বাবা নিজেই স্বীকার করেছেন দোষ

দীপকের বড় ভাই বিজয় যাদব সাংবাদিকদের জানান, “সে নিজেই স্বীকার করেছে। বলেছে—‘আমার ফাঁসি হওয়া উচিত’। পুরো পরিবার শোকাহত।”

পুলিশ আরও জানায়, কোচ অজয় যাদবের সঙ্গে রাধিকার একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে সে বিদেশে যাওয়ার বা বাসা ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল। একটি কাঁধের ইনজুরির পর ক্যারিয়ার পরিবর্তনের কথা ভাবছিল রাধিকা। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার আগ্রহের কথাও বলেছিল সে।

একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সে বাবাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পরিবারের সম্মান নষ্ট করবে না। তবুও, দীপক যাদব কখনো খুশি ছিলেন না।’

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×