
ছবি: সংগৃহীত
এক সময় ছিলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ভারতীয়দের একজন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিষ্ঠিত বহু কোম্পানির মালিক, বিলাসবহুল জীবন, নিজের ব্যক্তিগত জেট, একাধিক রোলস রয়েস গাড়ি—সবই ছিল তার। কিন্তু মাত্র একটি বড়সড় ভুল সবকিছু তছনছ করে দিলো। আজ তিনি ইতিহাসের এক হৃদয়বিদারক ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি।
কে এই ব্রি শেট্টি?
ভারতের কর্ণাটকের উদুপিতে ১৯৪২ সালের ১ আগস্ট এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেন ভাবাগতু রঘুরাম শেট্টি, যিনি সবার কাছে ‘ব্রি শেট্টি’ নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে তিনি ফোর্বসের ‘ভারতের ১০০ শীর্ষ ধনী’ তালিকায় জায়গা করে নেন। ২০১৯ সালে ছিলেন ৪২তম স্থানে।
জীবন শুরু করেছিলেন একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে। ১৯৭৩ সালে মাত্র ৮ ডলার হাতে নিয়ে পাড়ি জমান দুবাই। শুরু হয় দরজায় দরজায় ওষুধ বিক্রির সংগ্রাম।
কয়েক বছরের মধ্যেই কিছু প্রভাবশালী মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরি করে তিনি গড়ে তোলেন নিউ মেডিকেল সেন্টার (NMC)—দুবাইয়ের প্রথম বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। শুরুতে ক্লিনিকটির একমাত্র চিকিৎসক ছিলেন তার স্ত্রী চন্দ্রকুমারী শেট্টি।
আজ NMC-এর সেবা পৌঁছে গেছে ৮টি দেশের ৪৫টি প্রতিষ্ঠানে, প্রতি বছর ৪০ লাখেরও বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
NMC ছিল প্রথম গালফ কোম্পানি যারা লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় এবং FTSE 100 ইনডেক্সেও জায়গা করে নেয়। ২০০৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নিওফার্মা’, যা উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে. আবদুল কালাম।
এছাড়া প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানো সহজ করতে গড়ে তোলেন UAE Exchange, যা ২০১৬ সাল নাগাদ ৩১টি দেশে ৮০০ অফিস স্থাপন করে।
উত্থান যখন পতনের মুখোমুখি
সফল এই ব্যবসায়ী একসময় ছিলেন ২০ হাজার কোটি রুপির মালিক। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার দুটি সম্পূর্ণ ফ্লোর, একাধিক প্রাসাদতুল্য ভিলা ও বিলাসবহুল যানবাহনে ছিল তার জীবন।
কিন্তু ২০১৯ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠান Muddy Waters Research প্রকাশ করে যে, তার কোম্পানিগুলো এক বিলিয়ন ডলারের গোপন ঋণের মধ্যে ডুবে আছে এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। মূল অভিযোগ ছিল, কোম্পানির ক্যাশ ফ্লো মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফুলিয়ে ফোলানো হয়েছে।
ধ্বংসের সূত্রপাত
এই অভিযোগের পরপরই কোম্পানির শেয়ারমূল্য ধস নামতে থাকে। শেষমেশ ১২,৪৭৮ কোটি রুপির কোম্পানি মাত্র ৭৪ রুপিতে বিক্রি করতে বাধ্য হন ব্রি শেট্টি। ২০২০ সালে তিনি NMC-এর বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ইউকে সরকার কোম্পানিকে প্রশাসনের অধীনে নেয়।
অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয় এবং কোম্পানিগুলোকে ব্ল্যাকলিস্ট করে। ভারতেও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
শেষ কোথায়?
এক সময়ের ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক আজ প্রায় নিঃস্ব। ২০২০ সালে ফোর্বস তাকে ‘বিলিয়নিয়ার তালিকা’ থেকে বাদ দেয়।
মুমু ২