ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলার জবাবে নেতানিয়াহুর হুঙ্কার, “আরও বড় কিছু আসছে!”

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৪৯, ১৪ জুন ২০২৫

ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলার জবাবে নেতানিয়াহুর হুঙ্কার, “আরও বড় কিছু আসছে!”

ছ‌বি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে তুমুল হামলা-পাল্টা হামলা চলেছে। ইরানের দাবি, তাদের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর জবাবেই এই পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েল তাদের সামরিক ইতিহাসের "সবচেয়ে বড় অভিযান" পরিচালনা করে। ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে তারা ইরানের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এর মধ্যে ছিল পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং সামরিক কমান্ড সেন্টার। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীরা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এরই জবাবে শুক্রবার রাতে ইরান ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। আকাশজুড়ে বিস্ফোরণের শব্দ, সাইরেনের শব্দে কেঁপে ওঠে শহর। লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে বলা হয়।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড (IRGC) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। তারা আরও দাবি করে, “দ্রুত গতির স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা হয়েছে।”

তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) জানিয়েছে, তাদের একটি নৌবাহিনীর জাহাজ পাঁচটি ইরানি ড্রোন সফলভাবে ধ্বংস করেছে। তারা ইরানের এই হামলাকে "অপরাধমূলক আগ্রাসন" বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বিশ্ববাসীকে এই ঘটনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করেছি। এটা কেবল শুরু, আরও বড় কিছু আসছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইরানের জনগণকে বলছি, এই ইসলামি শাসকগোষ্ঠী আপনাদের ৫০ বছর ধরে দমন করেছে এবং এখন আমাদের দেশ ধ্বংসের হুমকি দিচ্ছে। এই শাসকগোষ্ঠীর পতন এখন সময়ের ব্যাপার।”

নেতানিয়াহুর বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই ইরান আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জেরুজালেম ও তেল আবিবে পুনরায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, এটি ছিল ইরানের দ্বিতীয় দফার হামলা।

ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা CNN-কে জানান, “যদি অন্য কোনো দেশ ইসরায়েলকে রক্ষা করতে আসে, তবে তাদের ঘাঁটিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে।”

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “দুই মাস আগে আমি ইরানকে একটি পারমাণবিক চুক্তির জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিলাম। আজ সেই সময়সীমার শেষ দিন। তারা সুযোগ হারিয়েছে। এখন তাদের সামনে আরেকটি ক্ষীণ সুযোগ আছে।”

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে এখন যুদ্ধের আঁচ, ক্ষেপণাস্ত্রের লেলিহান শিখা আর সাইরেনের শব্দ। বিশ্ববাসী উদ্বেগভরে তাকিয়ে আছে – এই সংঘাত কি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে? এখনো শান্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

এম.কে.

×