
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে শুধু নিরাপত্তাজনিত নয়, বরং নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ হিসেবেই চালিয়ে যাচ্ছেন, এমনটাই দাবি করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, দেশজুড়ে অভ্যন্তরীণ আন্দোলন এবং মিত্রদের ক্রমবর্ধমান চাপ, সবকিছু মিলিয়ে এক কোণায় ঠেকে গেছেন এই নেতা। আর সেই চাপ থেকে নিজেকে বাঁচাতেই ‘রাজনৈতিক বাঁচার লড়াই’-এ পরিণত হয়েছে গাজা যুদ্ধ।
যেখানে একসময় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার মতো শক্তিশালী দেশগুলো ইসরাইলের নির্ভরযোগ্য মিত্র ছিল, এখন তারাই নেতানিয়াহুর গাজা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুদ্ধের শুরুতে ইসরাইলকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন জানালেও এখন সমর্থনের ভাষা অনেকটাই নীরব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব এখন আর বিশ্বমঞ্চে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বরং তার পদক্ষেপগুলো ইসরাইলকে একঘরে করে ফেলছে।”
দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়ানোয় ইসরাইলের অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়ছে। অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য বিপর্যস্ত, বৈদেশিক বিনিয়োগে ধস, বেড়েছে জনগণের অসন্তোষ।
এমনকি ইসরাইলের শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও সামরিক বাহিনীর একাংশও এখন যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এটা শুধু তার নয়, গোটা ইসরাইলের জন্যও এক বড় কূটনৈতিক সংকট।
চামড়া দিয়ে আগুন নেভানোর মতো করে তিনি গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে নিজের বিচার ও দায় এড়াতে পারেন। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান তো নয়ই, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরাইলের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হচ্ছে।
একসময় যে যুক্তরাষ্ট্র ছিল ইসরাইলের দৃঢ় মিত্র, আজ তা অনেকটাই বদলে গেছে।
বর্তমান প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে, নেতানিয়াহুর প্রতি আগের সমর্থন আর দৃশ্যমান নয়।
এই অবস্থায় ইসরাইলের কূটনৈতিক ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
নেতানিয়াহুর গাজা যুদ্ধের পেছনে লুকিয়ে আছে কেবল নিরাপত্তা নয়, বরং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মরিয়া প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক মিত্রদের দূরত্ব, অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ ও অর্থনৈতিক দুর্দশার ভেতর দিয়ে ইসরাইল এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সায়মা