
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর সর্ববৃহৎ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যা এক রাতে সংঘটিত সবচেয়ে বড় আক্রমণ বলে উল্লেখ করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। কমপক্ষে ১২ জন নিহত, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে। ডজন খানেক মানুষ আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।
এই হামলা ছিল ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দ্বিতীয় বড় আকারের আক্রমণ। এর একদিন আগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার আগ্রাসনের শুরু থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়।
শনিবার গভীর রাতে চালানো হামলার পর রবিবার সকালে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, ৩০টিরও বেশি শহর ও গ্রামে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। তিনি বলেন, “রাশিয়া প্রতিদিন এই যুদ্ধ টেনে নিচ্ছে এবং মানুষ হত্যা করছে।” জেলেনস্কি আরও বলেন, "বিশ্ব সাপ্তাহিক ছুটিতে গেলেও যুদ্ধ থেমে নেই। এই বাস্তবতা উপেক্ষা করা যায় না।" তিনি রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “রুশ নেতৃত্বের ওপর যথেষ্ট চাপ না দিলে এই নৃশংসতা থামানো যাবে না।”
জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, "আমেরিকার নীরবতাই পুতিনকে উৎসাহিত করছে"—যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চাপ দেওয়ার একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। বর্তমানে তারা ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে অবৈধভাবে দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ রয়েছে।
শনিবার রাতের হামলাটি ছিল ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের দিক থেকে সবচেয়ে বড় আক্রমণ। এখন রাশিয়া এগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আরও উন্নত প্রযুক্তিতে সজ্জিত করছে। ‘শাহেদ’ ড্রোনগুলোতে আরও বেশি বিস্ফোরক ও উন্নত সেন্সর যুক্ত হয়েছে, যাতে সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানায়, শনিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিট থেকে শুরু করে রাশিয়া ৩৬৭টি বিভিন্ন ধরনের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়।এর মধ্যে ৪৫টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করা হয়, এবং ২৬৬টি ইউএভি নিষ্ক্রিয় করা হয়। দেশের অধিকাংশ অঞ্চল আক্রান্ত হয় এবং ২২টি স্থানে সরাসরি হামলার প্রমাণ মেলে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লাইমেঙ্কো জানান, ১৩টি অঞ্চলে আক্রমণ হয়, ৭০ জনের বেশি আহত হন, ৮০টির বেশি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং ২৭টি স্থানে আগুন লাগে। তিনি এটিকে "নিরীহ মানুষের ওপর পরিচালিত এক নির্মম সম্মিলিত হামলা" হিসেবে বর্ণনা করেন।
নিহত ১২ জনের মধ্যে তিন শিশু ছিল ৮, ১২ ও ১৭ বছর বয়সী। তারা ঝিতোমির অঞ্চলের একটি একই পরিবারের সদস্য, তাদের পিতামাতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কিয়েভ অঞ্চলে ৪ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে।
কিয়েভ শহরে ১১ জন আহত হয়েছে, বিভিন্ন স্থানে আগুন লেগেছে, এবং আবাসিক ভবন, এমনকি একটি ডরমিটরিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের শত শত মানুষ মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে। আকাশে ড্রোনের গর্জন শোনা গেছে, মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে শহর।একজন বিবিসি সংবাদকর্মী জানান, তার বাসার মাত্র পাঁচ মিনিট দূরে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এই হামলা এমন এক সময়ে হলো, যখন কিয়েভে বার্ষিক 'কিয়েভ দিবস' উদযাপন চলছিল।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, একই রাতে ১২টি অঞ্চলে ১১০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।
মস্কো মেয়র সের্গেই সোব্যানিন বলেন, রাজধানীর দিকে আসা ১২টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। তুলা অঞ্চলে একটি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে আবাসিক ভবনের জানালাগুলো ভেঙে পড়ে, তবে কেউ আহত হননি।
রবিবার ছিল যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের তৃতীয় ও শেষ দিন। গত তিন দিনে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয় পক্ষই ১,০০০ করে বন্দী মুক্তি দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়া ছিল তিন বছর পর প্রথম সরাসরি আলোচনার ফল, যা তুরস্কে অনুষ্ঠিত হয়।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টার ফোনালাপ হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেন, "আলোচনাটি ভালো হয়েছে", এবং দু’দেশ "তৎক্ষণাৎ আলোচনা শুরু করবে। তবে পুতিন এখনো ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হননি, শুধু বলেছেন, তারা "ভবিষ্যতের সম্ভাব্য শান্তি নিয়ে একটি স্মারকলিপি তৈরি করতে প্রস্তুত।"
শহীদ