
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিল বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয় হাভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী গ্রহণের অনুমোদন। ফলস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৬,৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত, যাদের মধ্যে প্রায় ৮০০ জন ভারতীয় নাগরিক।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS) হাভার্ড ইউনিভার্সিটির Student and Exchange Visitor Program (SEVP) সার্টিফিকেশন বাতিল করে দিয়েছে। এর ফলে এখন থেকে হাভার্ড কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পারবে না। এমনকি যারা ইতোমধ্যেই পড়ছেন, তাদের নতুন কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সফার নিতে হবে, নইলে তাদের ভিসা বাতিল হয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।
এই অভাবনীয় সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে হাভার্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বিশ্ববিদ্যালয়টি মার্কিনবিরোধী প্রতিবাদ এবং “ইহুদি সহিংসতা” ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে DHS। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি হাভার্ডের প্রায় ২.৭ মিলিয়ন ডলারের সরকারি অনুদান বাতিল করে দেয়, যা এই পদক্ষেপের পূর্বাভাস দিয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কাছে DHS ছয়টি শর্ত দিয়েছে, যেগুলো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পূরণ করতে হবে, তা না হলে SEVP সার্টিফিকেশন পুনর্বহাল হবে না। শর্তগুলো মধ্যে রয়েছে গত পাঁচ বছরে সকল বিদেশি শিক্ষার্থীর:
1. অবৈধ কার্যকলাপের রেকর্ড
2. সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রমাণ
3. হুমকির ঘটনার ভিডিও ও অডিও ফুটেজ
4. অন্য শিক্ষার্থী বা কর্মীদের অধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ
5. শাস্তিমূলক রেকর্ড
6. প্রতিবাদ কর্মসূচির সকল অডিও-ভিডিও ফুটেজ
বিশ্ববিদ্যালয়টির SEVIS অ্যাক্সেসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা ও উপস্থিতি তদারকি করা হয়। এতে করে কোনো নতুন বিদেশি শিক্ষার্থী হাভার্ডে F-1 বা J-1 ভিসা নিয়ে ভর্তি হতে পারবে না।
এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা, যাদের পড়াশোনা মাঝপথে থেমে যেতে পারে। বিশেষ করে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হাভার্ডে এসেছিলেন।
হাভার্ড এখন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চেষ্টা করছে DHS-এর দেওয়া শর্ত পূরণ করতে। তবে ব্যক্তিগত রেকর্ড ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ফুটেজ হস্তান্তর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কিছুটা আইনি ও নৈতিক দ্বিধাও তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, “আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা ও অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। একইসঙ্গে আমরা চাই বিদেশি শিক্ষার্থীরা যেন আইনি জটিলতায় না পড়ে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বেড়ে চলেছে, কারণ সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত হাভার্ড এই শর্তগুলো পূরণ করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারে কি না।
মিমিয়া