ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তালেবানকে পাশ কাটিয়ে নয়, কৌশলে এগোচ্ছে উপমহাদেশের তিন পরাশক্তি

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১২:৫০, ২৩ মে ২০২৫

তালেবানকে পাশ কাটিয়ে নয়, কৌশলে এগোচ্ছে উপমহাদেশের তিন পরাশক্তি

ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এখনও কোনো দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও, আঞ্চলিক শক্তিগুলো একে একে কূটনৈতিকভাবে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও ইরান—যারা অতীতে তালেবানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল—এখন বাস্তবতা মেনে নিয়ে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে হাঁটছে।

 ভারতের অবস্থান: 
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম শাসনামলে ভারত তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং কাবুলে দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তালেবানকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার মদদপুষ্ট বলে মনে করত ভারত। তবে ২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর, ভারত প্রথমে গোপনে, পরে প্রকাশ্যে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।
২০২২ সালের জুনে, তালেবানের পুনরায় ক্ষমতায় আসার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, ভারত “প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের” একটি দল কাবুলে পাঠিয়ে আবার দূতাবাস চালু করে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তালেবান মুম্বাইয়ের আফগান কনস্যুলেটে একজন ভারপ্রাপ্ত কনসাল নিয়োগ দেয়।

এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি দুবাইয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন — যা এখন পর্যন্ত ভারত ও তালেবানের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের সরাসরি সংলাপ। 
নয়াদিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কবীর তানেজা বলেন, তালেবানের আদর্শিক ঘাঁটি দারুল উলুম দেওবন্দ তো ভারতের মধ্যেই অবস্থিত।এ ধরনের ঐতিহাসিক ও সামাজিক সম্পর্ক কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। তাই ভারত এখন বাস্তবতাকে স্বীকার করে কৌশলগত ও ব্যবহারিকভাবে এগোচ্ছে।

পাকিস্তান: মিত্রতা থেকে সন্দেহে
পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবে তালেবানের মিত্র হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্ক টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে। সীমান্ত সংঘর্ষ, নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কারণে ইসলামাবাদ এখন তালেবানের প্রতি আগের মতো সহানুভূতিশীল নয়। তবে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে, এবং ২০২৫ সালের মে মাসে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ইরান: অতীতের শত্রুতা ভুলে বাস্তবিক সম্পর্ক
তালেবানের প্রথম শাসনামলে ইরান তাদের স্বীকৃতি দেয়নি বরং নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে সমর্থন দিয়েছিল, বিশেষ করে ১৯৯৮ সালে মাজার-ই-শরিফে তালেবানের হাতে ইরানি কূটনীতিক নিহত হওয়ার পর। সে সময় ইরান যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ইসলামিক স্টেট খোরাসান (IS-KP) এর বিরুদ্ধে লড়াই এবং সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যুতে, ইরান ও তালেবানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। ইরান তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও, গোপনে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায় ।
যদিও তালেবান সরকারকে এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, আঞ্চলিক শক্তিগুলো বাস্তবতা মেনে নিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। ভারত, পাকিস্তান ও ইরান—তিনটি দেশই নিজেদের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। এই কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

সা/ই

×